বিশ্ব

অস্ত্র সমর্পণে যে শর্ত দিলো হামাস

Advertisement

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের অস্ত্র সমর্পণ নিয়ে স্পষ্ট শর্ত দিয়েছে সংগঠনটি। হামাস নেতা খলিল আল-হায়া আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, গাজার প্রশাসনিক দায়িত্ব কোনো জাতীয় ফিলিস্তিনি সংস্থার কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে তাদের আপত্তি নেই। তবে অস্ত্র সমর্পণের জন্য গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান ও পুরো সেনা প্রত্যাহারের শর্ত রাখছে হামাস।

গাজার ভবিষ্যত: নির্বাচন ও প্রশাসনিক হস্তান্তর

খলিল আল-হায়া জানান, হামাস পুরো ফিলিস্তিনে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন, “গাজার শাসনব্যবস্থা এবং অস্ত্র সমর্পণসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আল জাজিরার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা চাই ফিলিস্তিনের জনগণ নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারুক।”

তিনি আরো বলেন, “গাজার প্রশাসনিক দায়িত্ব কোনো জাতীয় ফিলিস্তিনি সংস্থার হাতে হস্তান্তর করতে আমরা রাজি, তবে এটি হবে ইসরাইলি দখল শেষ হওয়ার পরে। গাজায় আমাদের অস্ত্র শুধু তখনই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”

অস্ত্র সমর্পণের শর্ত: ইসরাইলি প্রত্যাহার

হামাসের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, গাজার অস্ত্রসম্ভার এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শুধুমাত্র তখনই স্থির হবে, যখন ইসরাইল পুরোপুরি উপত্যকা থেকে সরে যাবে। আল-হায়া বলেন, “আমাদের অস্ত্রের ভবিষ্যৎ এখনও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে রয়েছে। আমরা চাই, প্রতিটি ধাপ শান্তিপূর্ণ ও ফিলিস্তিনের স্বার্থে হোক।”

যুদ্ধবিরতি ও জাতিসংঘের ভূমিকা

হামাস নেতা জানান, গাজা সীমান্ত এবং যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য জাতিসংঘ বাহিনী মোতায়েনের সঙ্গে আমরা সম্মত। এই পদক্ষেপকে তিনি বলেন, “এটি শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আমরা চাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতি নজরে রাখুক এবং মানবিক বিপর্যয় রোধে ভূমিকা রাখুক।”

ত্রাণ সংকট ও ইসরাইলের বাধা

গাজা উপত্যকার মানুষের জন্য ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করা নিয়ে তিনি ইসরাইলের নীতি সমালোচনা করেছেন। আল-হায়া বলেন, “গাজার মানুষকে প্রয়োজন মতো ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিদিন গাজায় ছয় হাজার ট্রাক ত্রাণ প্রয়োজন, কিন্তু ইসরাইলের বাধার কারণে মাত্র ছয়শো ট্রাকই পৌঁছছে। এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।”

তিনি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানান, “ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ইসরাইলের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হোক। মানুষ মরছে, এবং আমরা এই মানবিক সংকট দ্রুত সমাধান চাই।”

নতুন অভিযানের খবর

খলিল আল-হায়া জানিয়েছেন, “রোববার নতুন এলাকায় ইসরাইলি জিম্মিদের লাশ সন্ধান করা হবে।” এর মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, চলমান সংঘর্ষের মধ্যে এখনও বহু অজ্ঞাতনামা ঘটনা ঘটছে এবং সেগুলো আন্তর্জাতিক নজরদারির আওতায় আনা জরুরি।

হামাসের কৌশল ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি

অস্ত্র সমর্পণ নিয়ে হামাসের শর্ত এবং নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি তাদের রাজনৈতিক কৌশলকে আরও সুসংহত করে। আল-হায়া বলেন, “আমরা চাই ফিলিস্তিনের জনগণ নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারুক। অস্ত্র হস্তান্তর ও প্রশাসনিক দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয়গুলো আমাদের জন্য রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার বিষয়। এগুলো আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চাই।”

গাজার পরিস্থিতি: মানবিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ, অবরোধ ও ত্রাণ সংকট মানুষকে দারিদ্র্য, খাদ্যসঙ্কট এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখোমুখি করেছে। আল-হায়া বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু প্রতিরক্ষা নয়, মানুষের নিরাপত্তা ও জীবনমানের উন্নয়নও গুরুত্বপূর্ণ। গাজার শিশু, মহিলা ও বয়স্কদের ওপর বর্তমান চাপ কমানো এখন অতি জরুরি।”

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে আল-হায়া বলেন, “ফিলিস্তিনে স্থিতিশীলতা ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা প্রয়োজন। আমরা আশা করি, শান্তি প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারীরা সক্রিয় ভূমিকা রাখবে এবং আমাদের শর্তগুলোর গুরুত্ব বোঝবে।”

সংক্ষেপে:

  • হামাস গাজার প্রশাসনিক দায়িত্ব কোনো জাতীয় সংস্থার হাতে হস্তান্তরে আপত্তি রাখে না।
  • অস্ত্র সমর্পণের শর্ত: ইসরাইলি দখল অবসান ও সেনা প্রত্যাহার।
  • হামাস ফিলিস্তিনে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত।
  • যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘ বাহিনী মোতায়েন করতে সম্মত।
  • গাজার ত্রাণ সংকটে ইসরাইলের বাধা সমালোচিত।
  • মানবিক পরিস্থিতি উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান।

হামাসের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে নতুন করে ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘর্ষ ও শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা শুরু করবে। গাজার ভবিষ্যত, অস্ত্র হস্তান্তর এবং নির্বাচন—এগুলো সবই এখন নজরকাড়ছে বিশ্বের জন্য।

MAH – 13488 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button