বিশ্ব

রবিবার থেকে এক ঘণ্টা পেছাচ্ছে ইউরোপের ঘড়ির কাঁটা

Advertisement

অক্টোবরের শেষ রবিবারে ইউরোপের দেশগুলোতে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পেছানো হবে। এ বছরের জন্য এটি ২৬ অক্টোবর নির্ধারিত হয়েছে। এই সময় পরিবর্তনের মাধ্যমে শেষ হবে ‘ডে-লাইট সেভিং টাইম’ বা গ্রীষ্মকালীন সময় এবং শুরু হবে শীতকালীন বা স্ট্যান্ডার্ড টাইম।

সময় পরিবর্তনের কারণ ও উদ্দেশ্য

ঐতিহ্যগতভাবে এই নিয়মের মূল লক্ষ্য ছিল দিনের আলোকে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগানো। গ্রীষ্মকালে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে দেওয়ার ফলে সন্ধ্যার আলোতে বেশি সময় কাজ করা যেত, যা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সহায়ক ছিল। তবে অক্টোবরের শেষের দিকে দিন ছোট হতে শুরু করে, তাই ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পেছিয়ে স্বাভাবিক সময় ফিরিয়ে আনা হয়।

যদিও আধুনিক যুগে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের প্রাচীন যুক্তি এখন কার্যকর বলে মনে করা হয় না, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও সময় বদলের প্রথার ভবিষ্যৎ নিয়ে পুনর্বিবেচনা করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বছরে দুইবার সময় পরিবর্তনের ফলে মানুষের ঘুমের ছন্দ, কাজের তালিকা এবং জৈবিক ঘড়ি প্রভাবিত হয়।

ইউরোপে সময় পরিবর্তনের প্রভাব

ঘড়ির কাঁটা পেছানোর ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দৈনন্দিন জীবন কিছুটা বদলে যায়। দিনের আলো কমে যাওয়ায় সন্ধ্যা আগে আসে এবং মানুষের কাজের সময়সূচি সামঞ্জস্য করতে হয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থী এবং অফিসজীবীদের জন্য এই পরিবর্তন স্বাভাবিক রুটিনে সাময়িক বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময় বদলের ফলে কিছু মানুষ অল্প সময়ের জন্য ঘুমের ঘাটতি অনুভব করতে পারে, যার প্রভাব শরীরের ঘড়ি ও মানসিক অবস্থার উপর পড়ে। তবে বেশিরভাগ মানুষের জন্য এই প্রভাব সাময়িক।

বাংলাদেশের সঙ্গে সময় পার্থক্য

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের সময়ের পার্থক্যও এই পরিবর্তনের কারণে বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ, যখন লন্ডনে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পেছানো হবে, তখন বাংলাদেশের সঙ্গে সময়ের পার্থক্য আগের ৫ ঘণ্টার পরিবর্তে ৬ ঘণ্টা হবে। ফলে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে ফোন কল, অনলাইন মিটিং বা ভ্রমণ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য করতে হবে।

ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট

ডে-লাইট সেভিং টাইমের ধারণা প্রথম প্রয়োগ হয়েছিল ১৯০০ সালের শুরুতে। মূলত লক্ষ্য ছিল গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা এবং মানুষের কর্মদক্ষতা বাড়ানো। ইউরোপে এটি দীর্ঘদিন ধরে প্রথাগত নিয়ম হিসেবে চালু আছে। যদিও আধুনিক প্রযুক্তি এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থার পরিবর্তনের ফলে এই নিয়মের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

বর্তমান সময়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই প্রথার ভবিষ্যৎ নিয়ে পুনর্বিবেচনা করছে। তারা দেখছে, বিদ্যুৎ সাশ্রয় এখন আগের মতো উল্লেখযোগ্য নয়, বরং মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনধারার উপর প্রভাব বেশি।

বিশেষজ্ঞ মতামত

সময় পরিবর্তনের পেছনে বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের শরীরের জৈবিক ঘড়ি এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় নেয়। যারা রাতে বেশি কাজ করে বা স্কুলের শিক্ষার্থী, তাদের ক্ষেত্রে সাময়িক ক্লান্তি বা ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এক গবেষক মন্তব্য করেছেন, “যদি আমরা সময় বদলের প্রথা বজায় রাখি, তবে এটি শুধু সূচক পরিবর্তন নয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।”

রবিবার থেকে ইউরোপে ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা পেছানো মানে শুধু সময়ের সূচক বদল নয়। এটি ঋতুর পরিবর্তনের এক প্রতীকী বার্তাও বহন করে। দিন আরও ছোট হয়, সন্ধ্যা আগে নামে, এবং প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের সঙ্গে সময়ের পার্থক্য বাড়ার কারণে ব্যবসা, যোগাযোগ ও ভ্রমণ পরিকল্পনায় সজাগ থাকা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য আগে থেকেই রুটিন সামঞ্জস্য করা ভালো।

এম আর এম – ১৯৪০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button