বিশ্ব

ইয়েমেনে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে জাতিসংঘের ৭ কর্মী আটক

Advertisement

ইয়েমেনের হুতি-নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানা-তে ইসরায়েলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে জাতিসংঘের সাতজন কর্মীকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) হুতিদের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে জাতিসংঘ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সানা-র একজন নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছেন, গত রাত থেকে বিকেল পর্যন্ত ইসরায়েলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এই সাতজন জাতিসংঘ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে হুতিদের এক সূত্র গ্রেপ্তারের সংখ্যা নির্দিষ্ট করেননি।

আটক হওয়া কর্মীদের পরিচয় ও জাতিসংঘের অবস্থান

জাতিসংঘের জন্য কাজ করা এই সাতজনই ইয়েমেনি নাগরিক। আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে এখনও তাদের কর্মকাণ্ড বা অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই এই ঘটনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন পর্যবেক্ষক মনে করছেন, হুতিদের এ ধরনের অভিযান জাতিসংঘ কর্মীদের নিরাপত্তা ও মানবিক কার্যক্রমের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে হুতিদের অভিযানে ১৫ বিদেশি সহ ২০ জন জাতিসংঘ কর্মীকে আটক করা হয়েছিল। পরে তারা মুক্তি পেয়েছিলেন।

হুতিরা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

হুতিরা দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘের কর্মী এবং সাহায্যকর্মীদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তুলে তাদেরকে আটক করে আসছে। বিশেষ করে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই অভিযানের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার এই নতুন গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে উত্তেজনা বাড়ানোর একটি পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে। হুতিরা ইরানের বন্ধু শক্তিগুলোর অংশ হিসেবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে লোহিত সাগরের জাহাজ এবং ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে প্রায়শই হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

হুতিদের বিরুদ্ধে থাকা এই অভিযোগগুলো মূলত ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত। আগস্ট মাসে একটি বড় হামলার ঘটনায় হুতির প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার প্রায় অর্ধেক সদস্য নিহত হন। হুতিরা জাতিসংঘ কর্মীদের এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছে, যদিও জাতিসংঘ তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, হুতিরা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও মানবিক সহায়তা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রাখতে চাইছে। এতে করে কর্মীদের নিরাপত্তা এবং মানবিক কার্যক্রমে বাধা তৈরি হচ্ছে।

প্রভাব ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই ধরনের গ্রেপ্তারের ফলে জাতিসংঘের কর্মীরা তাদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারছে না। হুতিরা নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং জাতিসংঘ কর্মীদের উপর নজর রাখছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব সমর্থিত সরকার এই গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটিকে উত্তেজনা বৃদ্ধির একটি রূপ হিসেবে দেখছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, হুতিরা এভাবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রাখতে চাচ্ছে।

হুতিরা বনাম মানবিক কার্যক্রম

বিশেষজ্ঞদের মতে, হুতিদের এই ধরণের অভিযানের কারণে মানবিক সহায়তা এবং জাতিসংঘের কার্যক্রম সীমিত হচ্ছে। হুতিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সাথে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তিক্ত সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জটিল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

এছাড়া, গ্রেপ্তারের ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়লেও, বাস্তবে এটি জাতিসংঘ কর্মীদের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে এবং সংকট মোকাবিলায় দেরি ঘটায়।

ইয়েমেনে জাতিসংঘ কর্মীদের গ্রেপ্তার কেবল স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে নয়, বরং আন্তর্জাতিক উত্তেজনারও প্রতিফলন। হুতিদের অভিযানের ফলে মানবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য উদ্বেগের কারণ সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ঘটনায় আগামী দিনগুলোতে মানবিক সহায়তা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পরিপ্রেক্ষিত কেমন হবে তা গুরুত্বপূর্ণ।

এম আর এম – ১৯৩৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button