যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ভেতরে থাকা কোকেন উৎপাদন কেন্দ্র এবং মাদক পাচারের রুটগুলোতে হামলার পরিকল্পনা বিবেচনা করছেন। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনও এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ও নৌসামরিক মোতায়েনের তথ্যই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ওয়াশিংটন এই অঞ্চলে বড় ধরনের সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে।
হামলার পরিকল্পনা ও সামরিক প্রস্তুতি
ট্রাম্প প্রশাসনের সামরিক কৌশলে ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে হামলার সম্ভাব্য পরিকল্পনা উঠে এসেছে। ইউরোপে মোতায়েন থাকা নৌবাহিনীর আধুনিক বিমানবাহী রণতরি স্ট্রাইক গ্রুপ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
একাধিক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় গোপন সামরিক অভিযান পরিচালনার অনুমতি দিয়েছেন। প্রশাসনের লক্ষ্য মূলত ভেনেজুয়েলার মাদক কারখানা ও পাচারের রুটগুলোকে নিশানা করা।
কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও সামরিক সংমিশ্রণ
যদিও ট্রাম্প প্রশাসন সরাসরি হামলার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, কূটনৈতিক পথ পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট মাদুরোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশাসন মাদুরোকে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং প্রয়োজনে তিনি সামরিক অভিযানে নামবেন।
সাম্প্রতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা পরিচালনা করছিলেন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত রিচার্ড গ্রেনেল। চলমান পরিস্থিতিতে হামলার পরিকল্পনা হলেও কংগ্রেসকে জানানো বা অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
মাদক কারখানা ও পাচার রুট
ভেনেজুয়েলার মধ্যে স্থলভাগে হামলার সম্ভাবনা নিয়ে ট্রাম্প কঠোর বক্তব্য দিচ্ছেন। মার্কিন সামরিক বাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকাগুলোর ওপর নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। হেগসেথের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ রাতের অভিযানে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মাদক পাচারকারী একটি নৌকায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। এই মাসে মার্কিন অভিযান শুরুর পর থেকে ১০টি নৌযানে হামলা চালানো হয়েছে, এতে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধসংক্রান্ত দপ্তর জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা কোকেন উৎপাদনকারী প্রধান দেশ নয়। কোকেন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কোকা গাছ মূলত কলম্বিয়া, পেরু ও বলিভিয়ায় চাষ হয়। তবে ভেনেজুয়েলার মধ্য দিয়ে কিছু মাদক পাচার হয়, যা ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্যবস্তু।
রাজনৈতিক প্রভাব ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ ভেনেজুয়েলার ওপর রাজনৈতিক ও সামরিক চাপ বাড়াচ্ছে। প্রশাসনের উদ্দেশ্য শুধু মাদক চোরাচালান প্রতিরোধ নয়, একইসঙ্গে মাদুরো সরকারের দুর্বলতা সৃষ্টি করা।
কিছু মার্কিন কর্মকর্তা মনে করেন, মাদক বাণিজ্য থেকে লাভবান ব্যক্তিদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানোর সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কূটনৈতিক ও সামরিক সংমিশ্রিত কৌশল, যা আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে।
সম্ভাব্য ঝুঁকি ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ
ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে সামরিক অভিযান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিবেশে ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল বলেন, ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড স্ট্রাইক গ্রুপের পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক অপরাধী সংগঠনকে ভেঙে দেওয়া এবং মাদক সন্ত্রাসের মোকাবিলা করা।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, সরাসরি হামলা পরিস্থিতি জটিল করতে পারে এবং আঞ্চলিক সংঘাত বাড়াতে পারে। এছাড়া, কংগ্রেসের অনুমোদন ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ভেতরে মাদক কারখানায় সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনা করছেন। সামরিক প্রস্তুতি ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের সমন্বয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তেজনাপূর্ণ হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
পাঠকের প্রশ্ন হতে পারে, “ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে হামলা হলে আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন প্রভাবিত হবে?”—এর উত্তর সময়ই দেবে।
এম আর এম – ১৯৩৬,Signalbd.com



