আঞ্চলিক

অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পর খণ্ড খণ্ড করে বিক্রি করতেন তাঁতী দলের নেতা

Advertisement

ফেনীতে এক অটোরিকশা ছিনতাই চক্রের প্রধান নেতা হিসেবে ধরা পড়েছেন তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইয়াছিন মানিক। পুলিশ জানায়, ছিনতাইয়ের পর তিনি অটোরিকশার বিভিন্ন অংশ খুলে বিক্রি করতেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন মোট ছয়জন, যাদের মধ্যে তিনজন সরাসরি ছিনতাইয়ে অংশগ্রহণ করেন। ঘটনার ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ঘটনার বিস্তারিত

৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফেনী শহরের শহীদ শহিদুল্লা কায়সার সড়কের হোটেল ডিলাক্সের সামনে যাত্রীবেশে তিনজন অটোরিকশায় ওঠেন। তারা মহিপাল যাওয়ার কথা বলে ভাড়া ঠিক করেন। পরে ফতেহপুর ফ্লাইওভারের নিচে গিয়ে চালককে ছুরিকাঘাত করে অটোরিকশাটি নিয়ে যায়।

দুর্ঘটনার দুদিন পর, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার অটোরিকশা চালক মো. শাহিদ (১৭) ফেনী মডেল থানায় ছিনতাইয়ের অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয় এবং গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির পরিচয়

পুলিশ জানায়, যাত্রীবেশে ছিনতাইয়ে অংশ নেওয়া সদর উপজেলার উত্তর চাড়িপুর এলাকার এমদাদুল ইসলাম (২১), চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মনোহর আলী (২১), লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মো. রাশেদ (১৯) গ্রেপ্তার হন। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ফেনী পৌর তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইয়াছিন মানিক (৪০), নোয়াখালীর সুধারামপুরের নুরুল আমিন (২৮) ও সদর উপজেলার দেবীপুরের এনামুল হক (৫০) গ্রেপ্তার হন।

গ্রেপ্তার ছয়জন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। পুলিশ জানায়, ঘটনার মূল হোতা ইয়াছিন মানিক অটোরিকশার অংশ ভেঙে বিক্রি করতেন।

অটোরিকশা খণ্ডভাঙা করে বিক্রির প্রক্রিয়া

পুলিশ অনুসারে, ছিনতাইয়ের পর অটোরিকশা তিন ছিনতাইকারীর মাধ্যমে ইয়াছিন মানিকের কাছে পৌঁছে। পরে তিনি ও নুরুল আমিন মিলে অটোরিকশার চাকা, ব্যাটারি ও অন্যান্য অংশ আলাদা করে বাথানিয়া মসজিদের পুকুরে ফেলে রাখতেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনটি চাকা এবং চারটি ব্যাটারি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

ফেনী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ফেনী ও আশপাশের এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছিল।

ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রাথমিকভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

এলাকার প্রতিক্রিয়া

ফেনীর স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এ ধরনের চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল। গ্রেপ্তারের মাধ্যমে কমপক্ষে কিছুটা সুরক্ষা পাওয়া যাবে।”

ফেনী ও আশপাশের জেলাগুলোতে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা কম হয়নি। বিশেষ করে যাত্রীবেশে ছিনতাইয়ের ঘটনায় স্থানীয়রা আতঙ্কিত। পুলিশ ও প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও সম্পূর্ণ চক্র ভেঙে দেওয়া কঠিন হয়ে উঠছে।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অটোরিকশা ছিনতাই চক্র দীর্ঘদিন ধরে সংগঠিত ছিল এবং স্থানীয় রাজনীতি ও সামাজিক সংযোগের কারণে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করা কঠিন। আইনশৃঙ্খলা ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা ছাড়া পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

এছাড়া, অপরাধীরা নিত্য নতুন কৌশল ব্যবহার করছে। অটোরিকশা খণ্ড করে বিক্রি করা তাদের আর্থিক মুনাফা নিশ্চিত করার অন্যতম উপায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিক উদ্যোগও প্রয়োজন।

সারসংক্ষেপ  

ফেনীতে অটোরিকশা ছিনতাই চক্রের প্রধান নেতাসহ ছয়জন গ্রেপ্তার হওয়ায় অন্তত এই অঞ্চলে কিছুটা স্বস্তি এসেছে। তবে অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে এবং স্থানীয় মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে।

প্রশ্ন উঠছে, ভবিষ্যতে কি এ ধরনের চক্র সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব হবে?

এম আর এম – ১২৪৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button