বিশ্ব

লেবানন থেকে দেশে ফিরল ৩ লাখ সিরীয় শরণার্থী

Advertisement

চলতি বছরের শুরু থেকে লেবানন থেকে প্রায় ৩ লাখ সিরীয় শরণার্থী স্বেচ্ছায় তাদের মাতৃভূমি সিরিয়ায় ফিরেছেন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা লিসা আবু খালেদ আনাদোলু নিউজ এজেন্সিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সিরিয়ায় স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে এবং এটি শরণার্থীদের জন্য নতুন আশার এক আলো হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন কর্মসূচি: সাহায্য ও পুনর্বাসন

লিসা আবু খালেদ বলেন, “যারা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যেতে চান, তাদেরকে আমরা সহায়তা প্রদান করছি। শুধু ফিরে যাওয়া নয়, প্রত্যাবর্তনের পর তাদের পুনর্গঠন এবং পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সহায়তাও আমরা নিশ্চিত করছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শরণার্থীদের তাদের নিজ দেশে নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত করা।”

তিনি আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার লেবানন থেকে সিরিয়ার তারতুস প্রদেশের আল-আরিদা সীমান্তপথ দিয়ে ৪০০ সিরীয় শরণার্থী হোমস ও ইদলিবের বিভিন্ন অঞ্চলে ফিরে গেছেন। এটি স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন কর্মসূচির ষষ্ঠ ধাপ। প্রত্যাবর্তনকারী শরণার্থীদের মধ্যে প্রায় সবাই পরিবার নিয়ে ফিরছেন।

শরণার্থীদের ভোগান্তি ও প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনীয়তা

সিরিয়ার দুশ্চিন্তাপূর্ণ দশকের পর, বহু পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য লেবানন সহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছিল। লেবাননে থাকা সিরীয় শরণার্থীরা প্রায়শই সীমিত অর্থনৈতিক সুযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসনের সমস্যা নিয়ে যুদ্ধে আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষত তরুণ প্রজন্মের জন্য শিক্ষা ও নিরাপদ পরিবেশের অভাব অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউএনএইচসিআর সূত্রে জানা যায়, স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন কর্মসূচির মাধ্যমে, শরণার্থীরা দেশে ফিরে পুনর্নির্মাণে অংশ নিতে পারছেন। এর মধ্যে রয়েছে:

  • বাসস্থান পুনর্গঠন: ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ি ও আশ্রয় পুনঃনির্মাণ।
  • সামাজিক সহায়তা: মানসিক স্বাস্থ্যের সহায়তা এবং পুনঃবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ।
  • অর্থনৈতিক সহায়তা: কর্মসংস্থান এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার জন্য আর্থিক সহায়তা।
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: শিশু ও কিশোরদের স্কুলে ফেরানো, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।

এই উদ্যোগের ফলে শুধুমাত্র শরণার্থীরা নয়, স্থানীয় অর্থনীতি ও সমাজও উপকৃত হচ্ছে।

স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের ইতিহাস

লেবানন থেকে সিরিয়ায় স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ ২০২৫ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়। ২৯ জুলাই সিরিয়ার ইউএনএইচসিআর মুখপাত্র সেলিন স্মিৎ ঘোষণা করেছিলেন, যে প্রথম কনভয় লেবানন থেকে সিরিয়ায় যাত্রা শুরু করেছে।

এই কনভয়টি লেবাননে ইউএনএইচসিআর এবং সিরিয়ার স্থল ও নৌবন্দর বিষয়ক সাধারণ কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়। কনভয়ের মাধ্যমে প্রত্যাবর্তনকারীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা হয় এবং সীমান্তে প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন কর্মসূচির লক্ষ্য শুধুমাত্র সংখ্যাগত প্রত্যাবর্তন নয়। বরং এটি মানুষের জন্য নিরাপদ, সম্মানজনক এবং দায়িত্বশীল পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে সাহায্য করছে।

লেবাননের পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ

লেবানন, যা ছোট একটি দেশ, দীর্ঘদিন ধরে সিরীয় শরণার্থীদের অভ্যর্থনা দিচ্ছে। তবে দেশটির সীমিত সম্পদ ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠেছে।

  • অর্থনৈতিক চাপ: লেবাননের অর্থনীতি শরণার্থীদের সংখ্যা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
  • নিরাপত্তা ও সামাজিক চাপ: শরণার্থীদের উপস্থিতি স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মাঝে মাঝে সংঘাতের কারণ হতে পারে।
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা কঠিন হচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে, স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন কর্মসূচি শরণার্থীদের জন্য একটি কার্যকর সমাধান হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

প্রত্যাবর্তনকারীদের অভিজ্ঞতা

যারা দেশে ফিরে গেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা মিশ্র। অনেকেই সুখী, আবার কেউ কেউ এখনও উদ্বিগ্ন।

একজন শরণার্থী জানান, “আমরা দেশে ফিরে যাচ্ছি, কিন্তু বাড়ি ধ্বংসপ্রাপ্ত। আমরা নতুন জীবন শুরু করতে চাই। ইউএনএইচসিআর-এর সহায়তা না হলে এটা সম্ভব হতো না।”

অন্য একজন বলেন, “লেবাননে আমাদের জীবন অনেক কঠিন ছিল। আমরা দেশে ফিরতে চাই, যদিও সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে।”

এগুলো প্রমাণ করে যে, স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন শুধু একটি ভ্রমণ নয়, এটি মানুষের জন্য নতুন সুযোগ ও পুনর্গঠনের এক চ্যালেঞ্জিং কিন্তু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ইউএনএইচসিআর ভবিষ্যতেও লেবানন থেকে সিরিয়ায় স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। প্রতি ধাপে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের পাশাপাশি পুনর্বাসন, পুনর্গঠন এবং সমাজে পুনঃপ্রবেশ নিশ্চিত করা হবে।

এছাড়াও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা নিশ্চিত করতে ইউএনএইচসিআর কাজ করছে, যাতে প্রত্যাবর্তনকারীরা নিরাপদ, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী এবং সামাজিকভাবে সমর্থিত জীবন শুরু করতে পারেন।

লেবানন থেকে সিরিয়ায় ৩ লাখেরও বেশি শরণার্থীর স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তন মানবিক উদ্যোগের এক বড় সাফল্য হিসেবে ধরা হচ্ছে। এটি দেখাচ্ছে, মানবতার প্রতি আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ও সহযোগিতার শক্তিশালী প্রভাব। স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন কর্মসূচি শুধু সংখ্যা নয়, মানুষের জীবনে নতুন আশা ও সম্ভাবনার সূচনা।

MAH – 13465 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button