পশ্চিম তীরকে যুক্ত করলে ইসরাইল হারাবে যুক্তরাষ্ট্রের সব সমর্থন, ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পশ্চিম তীরের অংশ ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত করার সম্ভাব্য পরিকল্পনা নিয়ে ইসরাইলকে সতর্ক করেছেন। ট্রাম্পের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপে ইসরাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সমর্থন হারাতে পারে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওও একই লাইন ধরে বলেছেন, পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণ গাজা শান্তি চুক্তির জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এক সাক্ষাৎকারে, পশ্চিম তীর বা এর কোনো অংশ ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত করার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ‘এটা হবে না। কারণ আমি আরব দেশগুলোকে আশ্বাস দিয়েছি। এই পদক্ষেপ করলে ইসরাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সব সমর্থন হারাবে।’
ট্রাম্প আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আরব দেশগুলোর সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পশ্চিম তীরের অধিগ্রহণ সেই সমর্থনকে বিপন্ন করতে পারে। এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে।
ইসরায়েলের সংসদে পশ্চিম তীর সংযুক্তির উদ্যোগ
ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে একটি বিলের প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যাতে অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করা এবং ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের প্রাথমিক অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। ১২০ সদস্যের নেসেটে ২৫-২৪ ভোটে এই ধাপ পাস হয়েছে।
নেসেটের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জুডিয়া ও সামারিয়া অঞ্চলে ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা হবে। তবে আইন কার্যকর হওয়ার আগে আরও চার ধাপের ভোটাভুটি বাকি রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণ শান্তিচুক্তির জন্য হুমকি। তিনি মন্তব্য করেন, ইসরায়েলের পার্লামেন্টের পদক্ষেপ এবং সেখানে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের নৃশংসতা গাজা শান্তিচুক্তিকে বিপন্ন করছে।
রুবিও জানান, “ইসরায়েল একটি গণতান্ত্রিক দেশ; তারা ভোট নেবে, মানুষ তাদের অবস্থান জানাবে। তবে এই মুহূর্তে পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, অগ্রগতি হলেও শান্তি চুক্তি রক্ষা সম্ভব।
প্রভাব ও সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া
এই পদক্ষেপ গাজা ও পশ্চিম তীরে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ফিলিস্তিনের বিভিন্ন গ্রাম ও শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। পশ্চিম তীরের জনগণ উদ্বিগ্ন, এবং আন্তর্জাতিক মহলও ইসরায়েলের এই উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও আরব দেশগুলোর মধ্যস্থতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের সতর্কবার্তা শুধু রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া নয়, এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ইসরায়েলকে একটি সীমারেখা দেখাচ্ছে। পশ্চিম তীরের সংযুক্তি নিয়ে ইসরায়েলের পদক্ষেপ বিশ্ব শান্তি প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
রুবিও এবং অন্যান্য কূটনীতিকরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে না এবং গাজায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিভিন্ন আরব ও ইসলামি দেশকে নিয়ে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করছে।
পশ্চিম তীর সংযুক্তির পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে এবং ইসরায়েল-মার্কিন সম্পর্কের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াতে পারে। ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি স্পষ্ট করে দিয়েছে, এই পদক্ষেপে মার্কিন সমর্থন হারানো স্বাভাবিক। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় কীভাবে প্রভাব ফেলবে তা সময়ই দেখাবে।
এম আর এম – ১৯১৯,Signalbd.com