বিশ্ব

গাজায় যুদ্ধবিরতি অমান্য, অঞ্চলটিকে ‘বসবাসের অযোগ্য’ করেছে ইসরায়েল: কাতারের আমির

Advertisement

গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে, যা অঞ্চলটিকে মানুষের বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে বলে অভিযোগ করেছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। মঙ্গলবার কাতারের শুরা কাউন্সিলের বার্ষিক অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আমির শেখ তামিম উল্লেখ করেন, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে, যা ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, ইসরায়েলকে গণহত্যামূলক যুদ্ধের জন্য জবাবদিহি করতে হবে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ

কাতারের আমিরের অভিযোগ, গাজা উপত্যকায় সাম্প্রতিক হামলায় যুদ্ধবিরতি কার্যত ভঙ্গ হয়েছে। তিনি বলেন, “গাজা অঞ্চলে অব্যাহত হামলা এবং মানুষের বসবাসের অযোগ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল। এটি সরাসরি যুদ্ধবিরতির ধারাবাহিক লঙ্ঘন।”

হামাসের অবস্থানে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। হামাস জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলি জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যদিও ইসরায়েলের হামলা ও ধ্বংসস্তূপের কারণে এটি ব্যাহত হচ্ছে।

গাজা যুদ্ধবিরতি ১০ অক্টোবর কার্যকর হয়। কাতার দীর্ঘদিন ধরে এই সংঘাত নিরসনে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। এর আগে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী হামাসের অবস্থানগুলোতে ১৫৩ টন বোমা নিক্ষেপ করেছিল।

কাতারের আমির বলেন, “দখলকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ এবং পূর্ব জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদ চত্বরকে ইহুদিকরণ করার অপচেষ্টা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইসরায়েল মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারের প্রতিনিধি দলের ওপর হামলা চালিয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার ফলে গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ সংঘাতে ৬৮ হাজার ২০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং এক লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন। আক্রান্তরা মূলত বেসামরিক জনগণ।

হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম জানিয়েছেন, ইসরায়েল নিয়মিত যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করছে এবং মানবিক সহায়তার প্রবাহকে রাজনৈতিক চাপের সঙ্গে যুক্ত করছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, যাতে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

কাতারের আমিরের বক্তব্যের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ পুনরায় গাজার সংকটের দিকে চলে এসেছে। তিনি বলেন, “এই আগ্রাসনের পর বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া এত তীব্র ছিল যে তা হামলাকারীদের স্তব্ধ ও বিচ্ছিন্ন করে দেয়।”

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও গাজায় মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের বিষয়টি তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।

বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ

অন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গাজার বর্তমান পরিস্থিতি শুধু মানবিক সংকট নয়, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি। বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যত শূন্যে পরিণত হবে এবং নতুন সংঘাতের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

কাতারের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কাতারের মধ্যস্থতাকারী উদ্যোগকে সমর্থন না দিলে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা কঠিন হবে।

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি অমান্য এবং ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার ফলে অঞ্চলটিকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলা হয়েছে। কাতারের আমির এই সংঘাতকে আন্তর্জাতিক নজরে আনার পাশাপাশি বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গাজার মানবিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি। নইলে সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়বে এবং হাজার হাজার সাধারণ মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হতে পারে।

এম আর এম – ১৮৮৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button