বিশ্ব

যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা, ইসরায়েলে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের সফর

Advertisement

গাজা উপত্যকায় টালমাটাল যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখতে নতুন কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই ধারাবাহিকতায় ইসরায়েল সফরে গেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে বসে তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে আরও শক্তিশালী ও দীর্ঘমেয়াদি করার উপায় নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ইসরায়েলে

জেডি ভ্যান্সের সফরের সময় তার সঙ্গে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনার, যারা প্রথম দফার যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। রোববার থেকে গাজায় নতুন করে সহিংসতা শুরু হলে চুক্তি হুমকির মুখে পড়ে। এরপরই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ইসরায়েলে পাঠানো হয়।

ইসরায়েলে পৌঁছানোর পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানানো হয়, “ইসরায়েলে স্বাগত, ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স।” এর মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে বার্তা দেওয়া হয়েছে— যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর।

নতুন সহিংসতায় চুক্তি হুমকির মুখে

রোববার গাজায় হামাসের একটি হামলায় দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়। এর জবাবে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালালে অন্তত ৪৫ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান। যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা অবস্থায় এমন হামলায় উভয় পক্ষের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সংসদে দেয়া ভাষণে বলেন, “হামাসের পরিষ্কার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জবাবে আমাদের বাহিনী গাজায় ১৫৩ টন বোমা নিক্ষেপ করেছে। আমাদের এক হাতে অস্ত্র, অন্য হাত শান্তির জন্য প্রসারিত।” তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ইসরায়েল এখনো শান্তি চায়, তবে হামাসের প্রতি কঠোর অবস্থান বজায় রাখতে চায়।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সতর্কবার্তা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “যুদ্ধবিরতি এখনও কার্যকর আছে। তবে হামাস যদি চুক্তি ভঙ্গ করে, তাদের নিশ্চিহ্ন করা হবে।”
হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং প্রতিটি পদক্ষেপে ইসরায়েল ও মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ

বিবিসি এবং নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, জেডি ভ্যান্সের সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু করা।
এই দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে—

  • গাজায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন
  • আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন
  • ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার
  • হামাসের নিরস্ত্রীকরণ

প্রথম ধাপে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছিল, তা যেন ভেস্তে না যায়— সেটি নিশ্চিত করতেই ভ্যান্স, উইটকফ ও কুশনারের এই সফর।

হামাসের প্রতিক্রিয়া ও জিম্মিদের ফেরত

হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান আলোচক খলিল আল-হায়্যা কায়রো থেকে এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা মধ্যস্থতাকারী ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আশ্বস্ত বার্তা পেয়েছি— গাজার যুদ্ধের সমাপ্তি আসন্ন।”
তিনি আরও জানান, হামাস নিহত জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দিচ্ছে এবং এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

ইসরায়েলি পক্ষও নিশ্চিত করেছে, রেড ক্রসের মাধ্যমে এক ইসরায়েলি নাগরিকের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে, যিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের প্রথম দফার হামলায় নিহত হয়েছিলেন।

দীর্ঘ যুদ্ধের ভয়াবহ মানবিক প্রভাব

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েলের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় গাজা রূপ নেয় ধ্বংসস্তূপে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত অন্তত ৬৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি পক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ওই হামলায় নিহত হয় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নাগরিক এবং ২৫১ জন জিম্মি হয়েছিলেন। এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।

“শান্তির জানালা এখনো খোলা”

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. সামির আলি বলেন, “ভ্যান্সের সফর কেবল কূটনৈতিক নয়, এটি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি পরীক্ষা। যদি যুদ্ধবিরতি টিকে যায়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব আবারও দৃঢ় হবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি টিকিয়ে রাখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যেমন কূটনৈতিক সাফল্য হবে, তেমনি এটি ইসরায়েল ও হামাস উভয়ের জন্যও বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।
গাজার পুনর্গঠন, জিম্মি বিনিময় এবং মানবিক সহায়তার পথ খুলে গেলে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই অঞ্চলে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।

তবে সবকিছুই নির্ভর করছে এই সফরের ফলাফল এবং উভয় পক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর।
পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

এম আর এম – ১৮৭৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button