
আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোলদাক জেলায় পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় অন্তত ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আফগান তালেবানরা পাকিস্তানি বাহিনীর বেশ কয়েকটি সামরিক পোস্ট ও ট্যাঙ্ক জব্দ করার দাবি করেছে। এই ঘটনাটি সীমান্তে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি করেছে।
সীমান্ত সংঘর্ষে বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের ঘটনা
আফগান তালেবানের মুখপাত্র মাওলানা জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, পাকিস্তানি বাহিনী স্পিন বোলদাক জেলায় নতুন করে হামলা চালিয়েছে। এতে ১২ জনেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৮০ জন নারী ও শিশু রয়েছেন। তালেবানরা দাবি করেছে, তারা পাকিস্তানি বাহিনীর বেশ কয়েকটি সামরিক পোস্ট ও ট্যাঙ্ক জব্দ করেছে এবং পাকিস্তানি সৈন্যদেরও হত্যা করেছে।
পাকিস্তান সরকার এই দাবি অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, তারা সীমান্তে তালেবানদের হামলা প্রতিহত করেছে এবং ১৫ থেকে ২০ জন তালেবান সদস্যকে হত্যা করেছে।
সীমান্ত উত্তেজনা ও সামরিক প্রতিক্রিয়া
স্পিন বোলদাক ও পাকিস্তানের চামান জেলার মধ্যে সীমান্তে এই সংঘর্ষটি ঘটে। আফগান তালেবানরা দাবি করেছে, পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এলাকায় অনুপ্রবেশ করে হামলা চালিয়েছে, যার ফলে এই সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায়, তালেবানরা পাকিস্তানি বাহিনীর সামরিক স্থাপনা ও যানবাহন লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
পাকিস্তান সরকার এই সংঘর্ষে ২৩ জন সৈন্য নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে এবং দাবি করেছে, তারা ২০০ জনেরও বেশি তালেবান সদস্যকে হত্যা করেছে। তবে আফগান তালেবানরা এই দাবি অস্বীকার করেছে এবং পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্ষতি সাধনের কথা জানিয়েছে।
ট্যাঙ্ক জব্দের ভিডিও প্রকাশ
আফগান তালেবানরা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে একটি পাকিস্তানি ট্যাঙ্ক আফগান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তালেবান যোদ্ধারা ট্যাঙ্কটি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং এটি তাদের সামরিক শক্তির প্রদর্শন হিসেবে উপস্থাপন করছে।
তবে ভিডিওটির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ, এটি আসলেই জব্দ করা ট্যাঙ্ক কিনা বা ভিডিওতে দেখানো ট্যাঙ্কটি সেই একই ট্যাঙ্ক কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পটভূমি
এই সংঘর্ষটি নতুন নয়; এর আগেও সীমান্তে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ১১ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে আফগান তালেবানরা পাকিস্তানি বাহিনীর বেশ কয়েকটি পোস্টে হামলা চালায়, যার ফলে পাকিস্তানও পাল্টা আক্রমণ করে। এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষেরই হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
পাকিস্তান সরকার দাবি করেছে, তারা আফগানিস্তানে অবস্থানরত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে আফগান সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, তারা তাদের ভূখণ্ডে অন্য দেশের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয় না।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও যুদ্ধবিরতি
এই সংঘর্ষের পর, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান উভয়ই ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আফগান সরকারের অনুরোধে এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
এই যুদ্ধবিরতি সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি পদক্ষেপ হলেও, দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে আরও আলোচনা প্রয়োজন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
এই সংঘর্ষের ফলে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠেছে। উভয় পক্ষই একে অপরকে দায়ী করছে এবং সীমান্তে সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি করছে। এই পরিস্থিতি কেবল উভয় দেশের জন্যই নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য উদ্বেগজনক।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘর্ষের দিকে নজর রাখছে এবং উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে। বিশেষ করে, ভারত, সৌদি আরব ও কাতার এই সংঘর্ষের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে।
স্পিন বোলদাক সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর, আফগান তালেবানরা পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর সামরিক পোস্ট ও ট্যাঙ্ক জব্দ করার দাবি করেছে। এই সংঘর্ষ সীমান্তে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি করেছে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য উভয় পক্ষকে সংলাপে বসার আহ্বান জানাচ্ছে।
MAH – 13333 I Signalbd.com