বিশ্ব

ক্যানসারের কাছে হার মানলেন অভিনেতা পঙ্কজ ধীর

Advertisement

দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই শেষে বুধবার সকালে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন ‘মহাভারত’-খ্যাত অভিনেতা পঙ্কজ ধীর। প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময়জুড়ে অভিনয়জীবনে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অমর হয়ে রইলেন তিনি।

ভারতের খ্যাতনামা অভিনেতা পঙ্কজ ধীর আর নেই। দীর্ঘ দুই বছর ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই শেষে বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে মুম্বাইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহকর্মী অভিনেতা অমিত বহল ভারতীয় গণমাধ্যমকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

পঙ্কজ ধীরের মৃত্যুতে বলিউডে শোকের ছায়া

অভিনেতার মৃত্যুতে বলিউড ও টেলিভিশন অঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। সূত্র জানায়, প্রায় দুই বছর আগে একটি অস্ত্রোপচারের সময়ই তার শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে কিছুদিন সুস্থ থাকলেও গত কয়েক মাসে তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। সম্প্রতি আবারও জটিল অস্ত্রোপচার হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হয়নি এই বর্ষীয়ান অভিনেতাকে।

তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভক্ত, সহকর্মী ও বন্ধুদের শোকবার্তায় ভরে ওঠে। অভিনেতা আশুতোষ রানা লিখেছেন, “একজন পরিশ্রমী, বিনয়ী ও অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষকে হারালাম। কর্ণ চরিত্রে পঙ্কজজির অভিনয় আজও অনন্য।”

‘মহাভারত’-এর কর্ণ চরিত্রে অমর পঙ্কজ ধীর

পঙ্কজ ধীরের অভিনয়জীবনের সবচেয়ে বড় মাইলফলক হলো বিআর চোপড়ার পরিচালনায় তৈরি ১৯৮৮ সালের টেলিভিশন ধারাবাহিক ‘মহাভারত’। সেখানে তিনি কর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে কোটি দর্শকের মনে জায়গা করে নেন। ভারতজুড়ে এবং দেশের বাইরে এই ধারাবাহিকের জনপ্রিয়তা তাকে রাতারাতি তারকাখ্যাতি এনে দেয়।

এরপর থেকে তিনি বলিউডের অসংখ্য সিনেমায় সহ-অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সোলজার’, ‘জমিন’, ‘আন্দাজ’, ‘বাদশা’, এবং ‘টারজান: দ্য ওয়ান্ডার কার’। তিনি ৯০-এর দশক থেকে ২০২০-এর দশক পর্যন্ত নিয়মিত কাজ করে গেছেন টিভি সিরিজ, সিনেমা ও ওয়েব সিরিজে।

পাঁচ দশকের অভিনয়জীবনে সাফল্যের গল্প

পঙ্কজ ধীরের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে। প্রায় ৫৫ বছরের দীর্ঘ অভিনয়জীবনে তিনি শুধু অভিনেতাই নন, একজন পরিচালক হিসেবেও নিজের প্রতিভার প্রমাণ রেখেছেন। তিনি দুটি হিন্দি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন, যেখানে তার অভিনয়জীবনের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছিল।

২০২৪ সালেও তিনি ‘ধ্রুব তারা’ নামের একটি ধারাবাহিকে অভিনয় করছিলেন। দীর্ঘ অসুস্থতা সত্ত্বেও অভিনয়ের প্রতি তার ভালোবাসা কখনও কমেনি। সহকর্মীরা জানান, তিনি শুটিং সেটে সবসময় ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করতেন।

পরিবার ও সহকর্মীদের শোক

পঙ্কজ ধীর রেখে গেছেন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে। তার পুত্র নিকিতিন ধীর নিজেও একজন বলিউড অভিনেতা, যিনি ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ও ‘শেরশাহ’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। পিতার মৃত্যুতে নিকিতিন ধীর সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “আমার হিরো, আমার শিক্ষক, আমার বাবা – তোমার শিক্ষা ও ভালোবাসা চিরকাল সঙ্গে থাকবে।”

‘সিনে অ্যান্ড টিভি আর্টিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষ থেকেও তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়, “পঙ্কজ ধীর ছিলেন এক প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। মঞ্চ, টেলিভিশন ও সিনেমা – সব জায়গাতেই তিনি তাঁর প্রতিভা দিয়ে আলো ছড়িয়েছেন।”

শেষকৃত্য ও বিদায়বেলা

অভিনেতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে মুম্বাইয়ের একটি শ্মশানে। পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকবেন বলিউডের বহু তারকা, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা।

তার প্রয়াণে ভারতীয় বিনোদন জগত এক মহান অভিনেতাকে হারালো, যিনি শুধু পর্দায় নয়, বাস্তব জীবনেও ছিলেন অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা।

এক প্রজন্মের স্মৃতিতে অমর থাকবেন পঙ্কজ ধীর

‘মহাভারত’-এর কর্ণ চরিত্র, অসংখ্য সিনেমায় চরিত্রাভিনয়, আর দর্শকের হৃদয়ে অগণিত স্মৃতি—সব মিলিয়ে পঙ্কজ ধীর রয়ে যাবেন চির অম্লান। তাঁর মতো নিবেদিতপ্রাণ শিল্পীর প্রয়াণ ভারতীয় বিনোদন জগতে এক বড় শূন্যতা তৈরি করেছে।

ভক্তদের মতে, পঙ্কজ ধীর ছিলেন এমন একজন শিল্পী, যিনি নীরবে কাজ করতেন কিন্তু গভীর ছাপ রেখে যেতেন। তাঁর কাজই আগামী প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেবে, প্রকৃত শিল্প কখনও মরে না।

এম আর এম – ১৭৮৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button