‘ওরা আমার চুল গায়েব করে দিয়েছে’ – টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ দেখে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প

টাইম ম্যাগাজিনের নতুন সংখ্যার প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ছবিকে ‘সর্বকালের সবচেয়ে বাজে ছবি’ আখ্যা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিযোগ, ছবিতে তাঁর পরিচিত চুল গায়েব করে দেওয়া হয়েছে এবং মাথায় বসানো হয়েছে এক অদ্ভুত মুকুটসদৃশ বস্তু।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও সমালোচনার কেন্দ্রে। এবার কারণ তাঁর নিজের চেহারা নিয়ে ক্ষোভ। বিখ্যাত সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিন তাদের সাম্প্রতিক সংখ্যার প্রচ্ছদে ট্রাম্পের একটি ছবি প্রকাশ করেছে, যা দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি। দাবি করেছেন, ছবিতে তাঁর চুল ‘গায়েব’ করে দেওয়া হয়েছে এবং তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে অদ্ভুতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ নিয়ে ট্রাম্পের ক্ষোভ
মঙ্গলবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, “টাইম ম্যাগাজিন আমার সম্পর্কে মোটামুটি ভালো প্রতিবেদন লিখেছে, কিন্তু প্রচ্ছদের ছবিটা সর্বকালের সবচেয়ে বাজে। তারা আমার চুলই গায়েব করে দিয়েছে! আর মাথার ওপর এমন কিছু বসিয়েছে, যা দেখে মনে হচ্ছে কোনো ছোট্ট ভাসমান মুকুট।”
তিনি আরও বলেন, “নিচের অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা ছবি আমি কখনোই পছন্দ করিনি, কিন্তু এই ছবিটা সত্যিই ভয়াবহ। আমি বুঝতে পারছি না, টাইম আসলে করছে কী?”
প্রচ্ছদটিতে ট্রাম্পের নিচ থেকে তোলা একটি ক্লোজ-আপ ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে তাঁর মুখের ভাব এবং আলো-ছায়ার ব্যবহার অনেকটাই নাটকীয়। ছবির পটভূমিতে কালচে রঙ ব্যবহার করা হয়েছে, যা সামগ্রিকভাবে এক ধরনের শক্তিশালী কিন্তু বিতর্কিত ইমপ্রেশন তৈরি করেছে।
টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন ও শিরোনাম
টাইম ম্যাগাজিনের নতুন সংখ্যার শিরোনাম “His Triumph” বা “তার বিজয়”। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় চুক্তি সম্পাদনে ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে বিষয়টি “ট্রাম্পের কূটনৈতিক সাফল্য” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে এই ইতিবাচক প্রতিবেদনের মাঝেই প্রচ্ছদের ছবি নিয়ে তৈরি হয়েছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, প্রতিবেদনের প্রশংসা সত্ত্বেও প্রচ্ছদে ট্রাম্পকে একটি ব্যঙ্গাত্মক বা প্রতীকী ভঙ্গিতে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা ইচ্ছাকৃত বলেই মনে হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের পোস্টের পরপরই তাঁর সমর্থক ও সমালোচকদের মধ্যে শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক। কেউ কেউ টাইম ম্যাগাজিনের নকশা ও শিল্পমানের প্রশংসা করেছেন, আবার অনেকেই বলছেন— এটি আসলে ট্রাম্পকে হেয় করার একটি কৌশল।
একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “টাইম বরাবরই তাদের প্রচ্ছদ দিয়ে বার্তা দেয়। এবারও তারা ট্রাম্পকে ব্যঙ্গ করেছে।” অন্যদিকে, একজন ট্রাম্প সমর্থক মন্তব্য করেন, “তাঁর চুলের বিষয়টি নিয়ে এমনভাবে খেলা করা অসম্মানজনক।”
এমনকি কিছু মার্কিন বিশ্লেষকও বিষয়টি নিয়ে মত দিয়েছেন। তাঁদের মতে, “টাইম ম্যাগাজিন সবসময়ই তাদের প্রচ্ছদে স্যাটায়ার বা প্রতীকী বার্তা দেয়। তবে এটি যদি ব্যক্তিগত আক্রমণ মনে হয়, তাহলে তা বিতর্ক সৃষ্টি করবেই।”
ট্রাম্প ও টাইমের পুরনো দ্বন্দ্ব
টাইম ম্যাগাজিনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নতুন করে তিক্ত হয়নি— এর আগেও বহুবার এমন বিতর্ক হয়েছে।
২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর টাইম তাঁকে “Person of the Year” ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তখনও ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ছবিটি ‘ভালো না’। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতেও ট্রাম্প মন্তব্য করেছিলেন, “টাইম ম্যাগাজিন এখনো টিকে আছে? আমি তো ভেবেছিলাম অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে!”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের মন্তব্য ট্রাম্পের স্বভাবসিদ্ধ; তিনি সাধারণত সমালোচনাকে নিজের প্রচারণায় পরিণত করেন। ফলে এই বিতর্কও তাঁর জনপ্রিয়তা কমাবে না, বরং আবারও তাঁকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে ঘটনাটি
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের জন্য মিডিয়ার প্রচ্ছদে উপস্থাপনা অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। একটি ছবি তাদের ভাবমূর্তি বদলে দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক গণমাধ্যম বিশ্লেষক বলেন, “টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদগুলো প্রতীকী অর্থ বহন করে। এখানে ট্রাম্পের মাথায় ছোট মুকুটের মতো বস্তু বসিয়ে সম্ভবত ‘ক্ষমতার পুনরুদ্ধার’ বা ‘বিজয়ের প্রতীক’ বোঝানো হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প সেটিকে ব্যঙ্গ হিসেবে নিয়েছেন।”
আরও অনেকে মনে করেন, ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া তাঁর আত্মপ্রচারণার অংশ— বিতর্ক সৃষ্টি করে মিডিয়া ফোকাসে থাকার কৌশল।
ভবিষ্যতে কী হতে পারে
টাইম ম্যাগাজিন এখনো এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য দেয়নি। তবে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচ্ছদ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকলে ম্যাগাজিনটি হয়তো শিগগিরই ব্যাখ্যা দিতে পারে।
এদিকে ট্রাম্পের দল এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রচারণায় ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইছেন তিনি— ফলে প্রতিটি সংবাদই তাঁর জন্য প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে উঠছে।
বিশ্লেষকদের মতে, “টাইমের প্রচ্ছদ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ট্রাম্প আবারও প্রমাণ করলেন, তিনি মিডিয়ার ভাষা বোঝেন এবং তা নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে জানেন।”
একটি প্রচ্ছদ ছবি নিয়েও যে বৈশ্বিক আলোচনা শুরু হতে পারে, তা আবারও প্রমাণ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ক্ষোভ যতই ব্যক্তিগত মনে হোক না কেন, এটি মার্কিন মিডিয়া সংস্কৃতির প্রতীকী এক অধ্যায় হয়ে থাকবে। এখন দেখার বিষয়, টাইম ম্যাগাজিন এই বিতর্কে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, আর ট্রাম্প আবার কীভাবে সেটিকে নিজের রাজনৈতিক সুবিধায় পরিণত করেন।
এম আর এম – ১৭৮৬,Signalbd.com