বিশ্ব

মাদাগাস্কারে ক্ষমতা দখল করলো সেনাবাহিনী

Advertisement

মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছে। সেনাবাহিনীর কর্নেল মিখায়েল র‌্যান্দ্রিয়ানিরিনা জাতীয় রেডিওতে এ খবর নিশ্চিত করেছেন। দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভ, প্রশাসনিক অসংগতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নেওয়ায় জনগণের মধ্যে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত

রয়টার্স এবং বিবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার মাদাগাস্কারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। কর্নেল মিখায়েল র‌্যান্দ্রিয়ানিরিনা জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী দেশের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, তবে জাতীয় সংসদ বহাল থাকবে। তিনি আরও জানান, সেনাবাহিনী, প্যারামিলিটারি ও পুলিশের কিছু সদস্যের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে, যা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবে।

এর আগে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সরকারের বিরোধী আন্দোলনের কারণে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা দেশের বাইরে চলে যান। ফরাসি সামরিক বিমানে তাকে সান্ত মেরি বিমানবন্দর থেকে ফ্রান্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর মাদাগাস্কারে বিক্ষোভ শুরু হয়। দুর্নীতি, প্রশাসনিক ব্যর্থতা, বিদ্যুৎ ও পানি সঙ্কট, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি—এসব অভিযোগের মধ্যে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে বিক্ষোভ বড় আকার ধারণ করে। জনতাসহ সেনাবাহিনীর একাংশও বিক্ষোভে যোগ দেয়।

মাদাগাস্কারের জাতীয় সংসদ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব পাস করে। ১৩০ জন সংসদ সদস্য রাজোয়েলিনার বিরুদ্ধে ভোট প্রদান করেন। তবে রাজোয়েলিনা সামাজিক মাধ্যমে দাবি করেন, ভোটটি ‘অসাংবিধানিক’, কারণ তিনি সংসদ বিলুপ্ত করেছেন।

সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক প্রভাব

সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, পরিস্থিতি অনুযায়ী বেসামরিক উপদেষ্টাদের যুক্ত করা হতে পারে এবং কয়েক দিনের মধ্যে একটি বেসামরিক সরকার গঠন করা হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপ দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরায় প্রতিষ্ঠায় কার্যকর হতে পারে। তবে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার সমর্থকরা এটি ‘অবৈধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

দেশের সাধারণ জনগণ বিক্ষোভ ও সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ নিয়ে বিভ্রান্ত ও উদ্বিগ্ন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনগণ আশা করছে নতুন ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাতে সক্ষম হবে। অনেকে মনে করছেন, সেনাবাহিনী সাময়িকভাবে দেশের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থিতিশীল করতে কাজ করছে।

পরিসংখ্যান ও তথ্য

  • বিক্ষোভের সূচনা: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • অভিশংসন ভোটে উপস্থিত সংসদ সদস্য: ১৩০ জন
  • সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত কমিটি: সেনা, প্যারামিলিটারি ও পুলিশ
  • প্রেসিডেন্ট দেশত্যাগ: ফ্রান্সের সামরিক বিমানে
  • বেসামরিক সরকার গঠন: পরিকল্পিত, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি প্রেসিডেন্টের বিরোধীদের সঙ্গে টানাপোড়েন সৃষ্টি করতে পারে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেসামরিক সরকারের স্বচ্ছতা ও প্রজ্ঞাপূর্ণ নেতৃত্ব ছাড়া সেনা-নির্ভর প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে না। এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মাদাগাস্কারের এই পরিস্থিতি মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে।

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

মাদাগাস্কারে রাজনৈতিক অস্থিরতা কমানোর জন্য সেনাবাহিনী ও নতুন গঠিত প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বেসামরিক সরকারের দ্রুত পুনঃগঠন, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, জনগণের আস্থা অর্জন—এসব হবে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনী এবং বেসামরিক কমিটির সমন্বিত কার্যক্রম প্রয়োজন।

মাদাগাস্কারে সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে রাজনৈতিক শূন্যস্থান পূরণ করেছে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিক্ষোভের মধ্যেই সেনা-নির্ভর প্রশাসনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সাধারণ জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতি নজর রাখছে। আগামীদিনে বেসামরিক সরকারের পুনঃগঠন এবং দেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

এম আর এম – ১৭৮৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button