
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও আঞ্চলিক নেতারা। এ চুক্তিতে গাজার বন্দি মুক্তি ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
মিশরের শারম আল-শেখে সোমবার গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আঞ্চলিক নেতারা। মিশর, কাতার ও তুরস্কের নেতারা গাজার শান্তি চুক্তির গ্যারান্টি হিসেবে এই ঘোষণাপত্রে সই করেছেন। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে জিম্মি বিনিময় সম্পন্ন হয়, যা দুই বছরের সংঘাতের পর একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ঘটনার বিস্তারিত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি অসাধারণ দিন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা, জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া এবং গাজার নিরাপত্তা ও পুনর্গঠন নিশ্চিত করা হবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে ট্রাম্প ইসরায়েলে এক ঝটিকা সফর করেন এবং সেখানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রশংসা করেন। এরপর তিনি শারম আল-শেখে পৌঁছে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় প্রায় দুই ডজনের বেশি আন্তর্জাতিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।
গত কয়েক বছরে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বিরূপতা বৃদ্ধি পায়। দুই বছরের সংঘাতের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। গাজা উপত্যকার অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে এবং সাধারণ মানুষ মানবিক সঙ্কটে পতিত হয়েছে।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে হামাস গাজার দুই বছরের জিম্মি থাকার পর শেষ ২০ জন জীবিত ইসরায়েলিকে মুক্তি দিয়েছে। বিনিময়ে ইসরায়েল তাদের কারাগারে থাকা ১,৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এটি দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
মানবিক ও সামাজিক প্রভাব
জিম্মি মুক্তির খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তেল আবিব, রামাল্লা এবং খানের ইউনিসে জনতা উল্লাস করেছে। বন্দিদের পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনদের আলিঙ্গন ও চুম্বনের মাধ্যমে স্বাগত জানিয়েছে। এই উদ্যোগ স্থানীয় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ও আশা ফিরিয়ে এনেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতি চুক্তি মানবিক সঙ্কট কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে গাজার ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো পুনর্গঠন ও দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আরও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।
পরিসংখ্যান ও তথ্য
- জিম্মি মুক্তি: ২০ জন ইসরায়েলি, বিনিময়ে ১,৯৬৮ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি
- গাজার নিহত: ৬৭,৮৬৯ (জাতিসংঘ অনুমান অনুযায়ী)
- সংঘাতের শুরুর তারিখ: ৭ অক্টোবর ২০২৩
- বিশ্ব নেতার উপস্থিতি: ২০+ জন
- চুক্তি স্বাক্ষর স্থান: শারম আল-শেখ, মিশর
এই পরিসংখ্যান দেখায় যে সংঘাতের মাত্রা কতটা গুরুতর ছিল এবং এই চুক্তি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্বজুড়ে শান্তিপ্রেমী ও মানবাধিকার সংস্থা গাজা চুক্তি স্বাগত জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, তবে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য আরও আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধান ও প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।”
হামাসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা ট্রাম্প ও চুক্তির মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে ইসরায়েল আগ্রাসন পুনরায় শুরু না করে এবং বন্দি মুক্তি প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর করতে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে—ইসরায়েলের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণে অস্বীকৃতি, এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকার পুনর্গঠন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত তত্ত্বাবধান ছাড়া চুক্তি টিকে থাকা কঠিন হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। পাশাপাশি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে যাতে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে ধ্বংসপ্রাপ্ত অঞ্চল পুনর্গঠন, মানবিক সাহায্য এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তৎপরতা অব্যাহত থাকা জরুরি।
প্রশ্ন রয়ে যায়, দীর্ঘদিনের সংঘাতের পর এই শান্তি কতদিন স্থায়ী হবে এবং ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে কি না।
এম আর এম – ১৭৮০,Signalbd.com