
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের মতে, রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ ইউক্রেনের সংঘাতের চেয়ে ভিন্নভাবে সংঘটিত হবে; পারমাণবিক ঝুঁকি এবং কৌশলগত প্রভাব আলাদা হবে।
ঘটনার বিস্তারিত
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট সোমবার (১৩ অক্টোবর) ন্যাটো সংসদীয় পরিষদের বৈঠকে বলেন, রাশিয়া এবং ন্যাটোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হলে তা ইউক্রেনের চলমান সংঘাতের মতো হবে না। তিনি জানান, যুদ্ধের ধরণ এবং কৌশলগত প্রভাব অনেকটাই ভিন্ন হবে। তবে নিরাপত্তা কারণে তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে পারলেন না।
রুট আরও বলেন, যদি সংঘাত শুরু হয়, তবে এটি রাশিয়ার পক্ষ থেকে হবে। তিনি স্পষ্ট করেননি, কেন মস্কো ন্যাটো রাষ্ট্রগুলোর দিকে আক্রমণ করতে চাইবে। যদিও এই আশঙ্কা পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে, রাশিয়া তা ‘অমূলক’ বলে দাবি করছে।
প্রক্সি যুদ্ধ হিসেবে ইউক্রেন
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ এখন পর্যন্ত রাশিয়া এবং ন্যাটোর মধ্যে প্রক্সি যুদ্ধ হিসেবে চলছে। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে কৌশলগতভাবে পরাজিত করার জন্য সরাসরি যুক্ত না হলেও, অস্ত্র ও অর্থ সহায়তার মাধ্যমে সংঘাতকে বাড়িয়ে তুলেছে।
রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী এবং পশ্চিমা সামরিক ইউনিটের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ এড়ানো গেলে, ইউক্রেনের যুদ্ধ রাশিয়া-ন্যাটো যুদ্ধের প্রাকৃতিক পূর্বাভাস হিসেবে দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতি পারমাণবিক ঝুঁকিকেও সামনে নিয়ে আসে।
পশ্চিমা এবং রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
ন্যাটো মহাসচিবের বক্তব্যের পর পশ্চিমা এবং রাশিয়ান নেতারা নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়াকে একটি সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে দেখছে, এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি বলেন, ইউরোপ বা ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রে আক্রমণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে এমন দাবি ‘মিথ্যা ও অবিশ্বাস্য’। তিনি জানান, এটি সম্পূর্ণ অর্থহীন।
আঞ্চলিক প্রভাব ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেনের সংঘাত শুধু একটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। উত্তরে বেলারুশ, দক্ষিণে মোল্দোভা, কৃষ্ণ সাগর এবং মধ্য এশিয়ার কিছু অঞ্চলেও এর প্রভাব পড়ছে। ইউক্রেনীয় যুদ্ধক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে রাশিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা এবং ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়গুলো রাশিয়ার জন্য বড় নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এতে রাশিয়া নতুন সামরিক জেলা স্থাপন এবং নতুন ইউনিট গঠন করছে।
সামরিক ও কৌশলগত প্রস্তুতি
রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ইউক্রেনে চলমান হাইব্রিড যুদ্ধের পাশাপাশি ইউরোপের সীমান্ত এলাকায় কৌশলগত প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা নতুন মোটর চালিত রাইফেল বিভাগ গঠন করছে এবং দক্ষিণ ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করছে।
পশ্চিমা দেশগুলোও ইউক্রেনে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাঙ্ক ও অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে যুদ্ধের ‘গেম চেঞ্জার’ তৈরি করার চেষ্টা করছে। তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এসব সরবরাহের গুরুত্বকে অতিরঞ্জিত মনে করছেন না এবং এটিকে যুদ্ধের ফলাফল পরিবর্তনের মূল কারণ হিসেবে দেখছেন না।
পারমাণবিক ঝুঁকি ও কৌশলগত সতর্কতা
রাশিয়ান এবং পশ্চিমা নেতারা বারবার পারমাণবিক ঝুঁকির কথা উল্লেখ করছেন। ইউক্রেনে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ মজুত হচ্ছে বলে খবর রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি সরাসরি রাশিয়া-ন্যাটো সংঘাতের সময় আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
এছাড়াও, রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপের মতো প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানিগুলোও সংঘাতের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন নিরাপত্তা এবং কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়া-ন্যাটো যুদ্ধ ইউক্রেনের যুদ্ধের মতো সহজ বা সীমিত হবে না। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের ক্ষেত্রে কৌশলগত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনেক জটিলতা নিয়ে আসবে। পারমাণবিক অস্ত্রের উপস্থিতি, পশ্চিমা সাহায্য এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে।
মার্ক রুটের বক্তব্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরু হলে তা ইউক্রেন সংঘাতের তুলনায় আলাদা কৌশল ও প্রভাব নিয়ে সংঘটিত হবে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, সরাসরি সংঘাত এড়ানো এবং কূটনৈতিক মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
রাশিয়া এবং ন্যাটোর মধ্যে সরাসরি যুদ্ধের সম্ভাবনা থাকলেও তা ইউক্রেনের চলমান সংঘাতের মতো হবে না। কৌশলগত প্রস্তুতি, পারমাণবিক ঝুঁকি এবং আঞ্চলিক প্রভাব এই সম্ভাব্য যুদ্ধকে ভিন্ন মাত্রা দিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কিভাবে এগোবে তা মূলত কূটনৈতিক উদ্যোগ ও সামরিক প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করবে।
এম আর এম – ১৭৬৭,Signalbd.com