
ইসরায়েল সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরব ও মুসলিম নেতাদের প্রশংসা করেন, পাশাপাশি ইরান ইস্যুতে ভবিষ্যতে শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা সম্পর্কে স্পষ্ট সংকেত দিয়েছেন।
ট্রাম্পের ভাষণ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি সফল হওয়ার পর ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে ভাষণ দেন। সেখানে তিনি একদিকে আরব ও মুসলিম নেতাদের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে ইরান ইস্যুতে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তি ও ভবিষ্যত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেন, “আরব দেশ ও মুসলিম নেতারা হামাসকে চাপ দিতে একত্র হয়েছেন, যাতে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা যায়। তাদের প্রতি আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই।” তিনি আরও যোগ করেন, “অনেকের সহযোগিতা পেয়েছি—কিছু ক্ষেত্রে আমরা তা আশা করিনি, এজন্য আমি প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাই।”
ট্রাম্প এই সহযোগিতাকে ‘ইসরায়েল ও বিশ্বের জন্য এক অবিশ্বাস্য সাফল্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির ওপরও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ইরান ইস্যুতে ট্রাম্পের বক্তব্য
ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “ইরানের জনগণ বাঁচতে চায়, তারা টিকে থাকতে চায়। আমরা যদি ইরানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে পারি, তবে তা হবে অসাধারণ।” তবে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তিকে ‘বিপর্যয়কর’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
ট্রাম্প বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে এত মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের পরও আমরা ইরানের প্রতিও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে রাখছি। তারা এখন একটি চুক্তি করতে চায়। দেখা যাক আমরা কী করতে পারি।”
ইসরায়েলি আইনপ্রণেতাদের মধ্যে এই বক্তব্যে নিস্তব্ধতা নেমে আসে, যা ইঙ্গিত দেয় যে, তেল আবিব এখনও এ বিষয়ে সংবেদনশীল অবস্থানে রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক সমীকরণ
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সৌদি আরবের সম্পর্ক দীর্ঘ সময় ধরে উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরব ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দেখা দিয়েছে। হিজবুল্লাহর প্রধান নাইম কাসেম সম্প্রতি সৌদি আরবের সঙ্গে ‘নতুন অধ্যায় শুরু’ করার আহ্বান জানিয়ে ইরানের নেপথ্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রকাশ করেছেন।
তেহরানের লক্ষ্য হচ্ছে আঞ্চলিক সমীকরণে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং ইসরায়েলের সামরিক হুমকির প্রেক্ষিতে সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্ত করা। এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের ভাষণ মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অবস্থান ও আঞ্চলিক কূটনৈতিক ভারসাম্য প্রতিফলিত করে।
প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কূটনৈতিক মাত্রা যোগ করতে পারে। যেখানে ওয়াশিংটন একইসঙ্গে আরব বিশ্বের প্রশংসা করছে এবং ইরানের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করছে, সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলেন, ট্রাম্পের সঙ্কেত ইঙ্গিত দেয় যে, মার্কিন কূটনীতি কেবল ইসরায়েলের প্রতি নয়, বরং আরব ও মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সংলাপের ওপরও নির্ভর করছে। এটি ইরান ইস্যুতে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির একটি সম্ভাব্য সূচনা।
বিশেষজ্ঞ মতামত
সিনিয়র মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক মাইকেল ইয়াং বলেন, “ট্রাম্পের বক্তব্য একটি সুক্ষ্ম বার্তা পাঠাচ্ছে। ইরান-সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্কের মধ্যে নতুন জোটের সম্ভাবনা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতি এখন অনেকটা ভারসাম্যপূর্ণ এবং জটিল।”
তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্প যদি ইরান-সৌদি সংলাপকে সমর্থন করেন, তবে এটি অঞ্চলটির স্থিতিশীলতা ও শান্তির সম্ভাবনা বাড়াবে।”
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই কূটনৈতিক বার্তা মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির পথ খুলে দিতে পারে। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপ আরব ও মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক মজবুত করার পাশাপাশি ইরান ইস্যুতে কূটনৈতিক আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি করছে।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শক্তিগুলো এ বিষয়ে কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা সময়ের অপেক্ষা। তবে ট্রাম্পের এই ভাষণ মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নির্দেশ করছে।
ইসরায়েল সফরে ট্রাম্পের ভাষণ আরব বিশ্বের প্রশংসা ও ইরান ইস্যুতে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির ইঙ্গিতের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে। এটি ওয়াশিংটনকে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে স্থাপন করছে, যেখানে আরব বিশ্বের সমর্থন এবং ইরানের সঙ্গে আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী মাসগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে নতুন জোট ও সমঝোতার দিক নির্দেশনা স্পষ্ট হবে।
এম আর এম – ১৭৫৮,Signalbd.com