বিশ্ব

পাকিস্তানে বাবার হাতে মেয়ের হত্যাকাণ্ড: টিকটক ভিডিও নিয়ে আপত্তি

Advertisement

পাকিস্তানে এক বাবা তাঁর কিশোরী মেয়েকে গুলি করে হত্যা করেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে মেয়ের টিকটক ভিডিও নিয়ে বাবার আপত্তি। পুলিশ জানিয়েছে, বাবার নাম আনোয়ার উল-হক এবং মেয়ের নাম হীরা আনোয়ার।

হত্যার পেছনের কারণ

মেয়েটির বয়স ১৩ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। আনোয়ার উল-হক মার্কিন নাগরিক এবং তাঁর মেয়ে হীরাও মার্কিন নাগরিক। সম্প্রতি আনোয়ার উল-হক পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তানে ফিরে আসেন। গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কোয়েটায় তিনি তাঁর মেয়ে হীরাকে গুলি করে হত্যা করেন। হত্যার পর আনোয়ার উল-হক প্রথমে তদন্তকারীদের জানান, অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তিরা তাঁর মেয়েকে গুলি করে হত্যা করেছে। তবে পরে তিনি স্বীকার করেন, তিনিই মেয়েকে হত্যা করেছেন।

টিকটক ভিডিওর প্রভাব

আনোয়ার উল-হক তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তিনি টিকটক ভিডিও শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে তাঁর মেয়ের পোস্টগুলো দেখেছেন এবং সেগুলো তাঁর কাছে ‘আপত্তিকর’ মনে হয়েছে। পুলিশ বলছে, হীরা কি অনার কিলিংয়ের শিকার হয়েছে, তা সহ অন্যান্য সব দিক তারা খতিয়ে দেখছে।

পাকিস্তানে অনার কিলিং

পাকিস্তানে ‘অনার কিলিং’ নতুন কিছু নয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর তথ্যমতে, প্রতিবছর দেশটিতে কথিত অনার কিলিংয়ের নামে শত শত মানুষ হত্যার শিকার হয়। এই হত্যাকাণ্ডের শিকার বেশিরভাগই নারী। সাধারণত, অনার কিলিংয়ে নিহত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনই জড়িত থাকেন এবং তারা দাবি করেন, পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

হীরা হত্যার বিষয়ে পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, মেয়েটির পোশাক-আশাক, জীবনধারা ও সামাজিক সম্মিলনের ব্যাপারে পরিবারের আপত্তি ছিল। পরিবারটি ২৫ বছর যুক্তরাষ্ট্রে ছিল এবং পাকিস্তানে ফিরে আসার আগে থেকেই হীরা টিকটকে ভিডিও পোস্ট করা শুরু করেছিল।

তদন্তের অগ্রগতি

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, হীরার মুঠোফোনটি তারা নিজেদের জিম্মায় নিয়েছে, যা লক করা অবস্থায় রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে হীরার বাবার শ্যালককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আইনগত ব্যবস্থা

বিচারে যদি অনার কিলিং প্রমাণিত হয় এবং আসামিরা দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তাঁদের বাধ্যতামূলকভাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। ২০১৬ সালে আইনে পরিবর্তন এনে এই বিধান চালু করা হয়। এর আগে, ভুক্তভোগীর পরিবার ক্ষমা করলে আসামিরা কারাদণ্ড এড়াতে পারতেন।

এই হত্যাকাণ্ডটি পাকিস্তানের সমাজে একটি গুরুতর সমস্যা তুলে ধরেছে। টিকটক ভিডিওর মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে নারীদের প্রতি সহিংসতা একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। সমাজের এই অন্ধকার দিকগুলোকে মোকাবেলা করতে হলে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button