বিশ্ব

ঘরে নয় ধ্বংসস্তূপে ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা, নেই শান্তির কোনো নাম-নিশানা

Advertisement

গাজা উপত্যকায় দুই বছরের নৃশংস সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও ফিলিস্তিনিরা তাদের পুরনো জীবনকে ফিরে পাননি। তারা ফিরছেন তাদের জন্মভূমিতে, কিন্তু সেই ঘর নেই, শুধু ধ্বংসস্তূপ আর তছনছ হয়ে যাওয়া এলাকা। শিশুরা খেলত যে মহল্লা, পরিবারের সঙ্গে বসত যেসব বাড়িঘর, সব এখন কেবল ধূলিময় ভাঙা দেয়াল ও ইটের স্তূপ। শান্তির কোনো চিহ্ন এখনো দেখা যায়নি।

বৃষ্টিভেজা রাস্তা ও শীতের তীব্রতা আরও কষ্ট বাড়াচ্ছে। আশ্রয়হীন ফিলিস্তিনিরা দাঁড়িয়ে থাকছেন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে, হারানো স্মৃতি আঁকড়ে ধরে। তবে এই কঠিন বাস্তবতাতেও তারা ফিরে আসছেন কারণ এই মাটি তাদের পরিচয়ের অংশ।

যুদ্ধবিরতির পর ফিলিস্তিনিদের ফেরার প্রক্রিয়া

মিসরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুমোদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, গাজার নির্দিষ্ট এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনা সরিয়ে নিচ্ছে এবং বন্দী ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দিচ্ছে হামাস।

ফিলিস্তিনিরা বাড়িঘরে ফিরছেন ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে। নুসেইরাত শরণার্থী শিবির ও গাজা নগরী সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিবারগুলো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ঘরে ফিরছেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে তারা হারানো দেয়াল, পরিচিত রাস্তা বা গাছ খুঁজছেন, যেন জীবনের টুকরো স্মৃতি পুনরুদ্ধার করতে পারে।

গাজার কর্তৃপক্ষ ও জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় ৪ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। স্কুল ধ্বংস হয়েছে ৫১৮টি, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৫৪টি, কৃষিজমির মাত্র ২ শতাংশই চাষযোগ্য। ফলে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে।

ফিলিস্তিনিরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই ফিরে আসছেন

গাজার মধ্যাঞ্চল ও উত্তরের এলাকায় ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনিরা বাড়িতে ফিরছেন। মেহেদি সাকলা নামের এক ফিলিস্তিনি বলেন, “জানি সব ধ্বংস হয়ে গেছে, তবু ফিরতে পেরে আমরা খুশি। দুই বছর পালিয়ে বেড়াতে গিয়ে অনেক কষ্ট ভোগ করেছি।”

শিশুরা ধ্বংসস্তূপের পাশে বসে খেলছে, কিছু পরিবার ভাঙা দেওয়াল ও ইটের স্তূপ ছুঁয়ে তাদের হারানো স্মৃতি মনে করছে। এই দৃশ্য ফিলিস্তিনিরা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মনে করিয়ে দিচ্ছে সংঘাতের ভয়াবহতা ও মানুষের টিকে থাকার চেষ্টা।

যুদ্ধবিরতির শর্ত ও সামরিক পরিস্থিতি

চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করবে। সেনারা ধাপে ধাপে নিরাপত্তা বজায় রাখবে। প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে।

যুদ্ধবিরতির আওতায় ফিলিস্তিনিরা বন্দী প্রায় দুই হাজার ব্যক্তিকে মুক্তি পাবে। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত, এবং তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সদস্য। তবে মুক্তিপ্রাপ্তদের ফেরৎ নেওয়ার সময় কোনো আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান হবে না।

গাজায় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও ত্রাণ সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার ও অন্যান্য দেশ অংশ নেবে। তবে মার্কিন সেনা সরাসরি গাজার মধ্যে প্রবেশ করবে না।

মানবিক পরিস্থিতি

বছরের পর বছর চলা সংঘাত ও অবরোধের কারণে ফিলিস্তিনিরা খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার তীব্র সংকটে আছেন। দুই বছরে ৪৬০ জন অনাহারে মারা গেছেন, যার মধ্যে ১৫৪ জন শিশু। ৭ লাখ ৪৫ হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষাবঞ্চিত।

বর্তমানে ফিরে আসা ফিলিস্তিনিরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই তাদের জীবন পুনর্গঠনের চেষ্টা করছেন। বৃষ্টির দিনগুলোতে এবং শীতের মরশুমে কষ্ট আরও বেড়ে যায়। তবু তারা ফিরছেন, কারণ এই ভূমি তাদের পরিচয়ের অংশ।

বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শান্তির সূচনা হলেও প্রকৃত চ্যালেঞ্জ এখন শুরু হয়েছে। গাজার পুনর্গঠন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এবং রাজনৈতিক একতা—এই সবই এখন ফিলিস্তিনিদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

ফিলিস্তিনিরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও তাদের মাটি ও পরিচয় ধরে রাখতে চেষ্টা করছেন। তবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শুধুমাত্র যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট নয়; দখলদারি বন্ধ, পুনর্গঠন এবং রাজনৈতিক সংলাপ জরুরি।

যুদ্ধবিরতির পর ফিলিস্তিনিরা তাদের জন্মভূমিতে ফিরে আসলেও ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তারা কেবল ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই বসবাস করছেন। মানবিক সংকট, নিরাপত্তার অভাব এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক জটিলতা এখনও সমাধান হয়নি। ফিলিস্তিনিদের টিকে থাকার আকাঙ্ক্ষা অমলিন, কিন্তু শান্তির কোনো নিশ্চিত নাম-নিশানা নেই।

এম আর এম – ১৭৪২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button