
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে সফররত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাক্কি পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান সীমান্ত সংঘর্ষের বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, আফগান বাহিনী আপাতত যুদ্ধবিরতি বজায় রেখেছে। মুতাক্কি বলেন, “শনিবার রাতে আমরা আমাদের সামরিক লক্ষ্য সফলভাবে সম্পন্ন করেছি, তাই সীমান্তে আপাতত সংঘর্ষে বিরতি দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাতার ও সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় সংঘর্ষ থামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আফগান মন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের সঙ্গে আফগানিস্তানের কোনো বৈরিতা নেই। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, “যদি পাকিস্তান শান্তি বজায় রাখতে না চায়, তাহলে আফগানিস্তানেরও বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে।”
সংঘর্ষের বিস্তারিত
শনিবার রাতের সংঘর্ষে আফগান বাহিনী পাকিস্তানের সীমান্তচৌকিগুলোর দিকে গুলি চালায়। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি পূর্বের পাকিস্তানি বিমান হামলার প্রতিশোধ হিসেবে করা হয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে পাল্টা জবাব দেওয়া হয় গোলাবর্ষণ ও ভারী অস্ত্রের মাধ্যমে। স্থানীয় সূত্র জানায়, আফগান সীমান্তের কয়েকটি চৌকি ধ্বংস হয়েছে।
পাকিস্তান ও আফগান বাহিনীর মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি চললেও, রবিবার সকাল নাগাদ সীমান্ত স্থলবন্দরগুলো আপাতত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রধান সীমান্তপথ তোরখাম ও চামানের পাশাপাশি খারলাচি, আঙ্গুর আড্ডা ও গুলাম খান নামের ছোট সীমান্ত পারাপারও বন্ধ রয়েছে।
সীমান্ত পরিস্থিতির প্রভাব
সীমান্তে সংঘর্ষের প্রভাবে দুই দেশের মধ্যকার যাতায়াত ও বাণিজ্য কার্যক্রম প্রভাবিত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। আফগান তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, “আফগানিস্তানের কোনো অংশেই এখন কোনো ধরনের নিরাপত্তাহুমকি নেই।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তে এই ধরনের সংঘাত দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করতে পারে। যদিও আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে আপাতত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে, পরিস্থিতি যে স্থিতিশীল হবে তা নিশ্চিত নয়।
অফিসিয়াল সূত্র অনুযায়ী, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত প্রায় ২,৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, আফগান তালেবান প্রশাসন পাকিস্তানবিরোধী সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে, যারা ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। তবে কাবুল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত বৃহস্পতিবার কাবুলে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) এক নেতাকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয় বলে পাকিস্তানি নিরাপত্তা সূত্র জানায়। নিহত হয়েছেন কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। এ ধরনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে সীমান্তে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আফগান মন্ত্রী মুতাক্কি সীমান্ত সংঘর্ষ থামানোর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, “কাতার ও সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় আমাদের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি নেওয়া হয়েছে।” আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মধ্যস্থতাকারী দেশের ভূমিকা সীমান্ত সংঘর্ষে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, সীমান্তে যে কোনো সময় নতুন সংঘাত শুরু হতে পারে। তাই দুই দেশের নেতৃত্বকে কূটনৈতিক ও সামরিকভাবে সংযমী হতে হবে।
আফগান সরকারের অবস্থান
মুতাক্কি জানিয়েছেন, পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের সঙ্গে আফগান সরকারের কোনো সমস্যা নেই। তবে, পাকিস্তান যদি আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলিতে হস্তক্ষেপ করে, তবে আফগান সরকার কঠোরভাবে 대응 করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, “আফগান জনগণ, সরকারপ্রধান, আলেম-উলামা এবং ধর্মীয় নেতারা দেশের স্বার্থে এক হয়ে লড়াই করবে।”
সামগ্রিক বিশ্লেষণ
সংঘর্ষের বর্তমান পরিস্থিতি আপাতত স্থিতিশীল মনে হলেও, সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা কমেনি। আফগানিস্তানের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও সীমান্তে কিছু এলাকায় গোলাগুলি থেমে থেমে চলছে। এই পরিস্থিতি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান উভয়ের পক্ষ থেকে স্থায়ী শান্তি ও সহযোগিতা ছাড়া সীমান্তে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা কঠিন। আফগান মন্ত্রীর সতর্কবার্তা অনুযায়ী, পরিস্থিতি উন্নতির জন্য কেবল মধ্যস্থতা নয়, উভয় দেশের কার্যকর কৌশল প্রয়োজন।
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুতাক্কি ভারতের নয়াদিল্লিতে স্পষ্ট করে বলেছেন, আপাতত আফগানিস্তান যুদ্ধবিরতি বজায় রেখেছে। সীমান্ত সংঘর্ষের কারণে যাতায়াত ও বাণিজ্য প্রভাবিত হলেও, কূটনৈতিক মধ্যস্থতায় উত্তেজনা কমানো সম্ভব হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী শান্তি নির্ভর করছে ভবিষ্যতে কূটনৈতিক সংলাপ ও সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকরভাবে চালানোর ওপর।
এম আর এম – ১৭৩৯,Signalbd.com