
আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সীমান্ত লঙ্ঘন এবং আফগান ভূখণ্ডে বিমান হামলার পর আফগান সেনা বাহিনী পাল্টা হামলা চালিয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও জানায়, যদি পাকিস্তান পুনরায় সীমান্ত লঙ্ঘন করে, তাহলে আফগান সেনারা দেশের সার্বভৌমতা রক্ষায় প্রস্তুত এবং তারা কঠোর জবাব দিতে বাধ্য।
রোববার এক বিবৃতিতে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় হুশিয়ার উচ্চারণ করে বলেছে যে, দেশের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য তারা সবসময় প্রস্তুত রয়েছে।
সীমান্তে সংঘর্ষ ও অভিযান
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ডুরান্ড লাইন সংলগ্ন পাকিস্তানি মিলিশিয়া ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে আফগান সেনারা একাধিক অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযানগুলো হেলমান্দ, কান্দাহার, জাবুল, খোস্ত, পাকতিয়া, কুনার এবং নাঙ্গারহার প্রদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় পরিচালিত হয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, এই অভিযানগুলোতে আফগান সেনারা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। পাকিস্তানি মিলিশিয়ার অনেক সদস্য নিহত বা আহত হয়েছে এবং তাদের কয়েকটি পোস্ট ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া, আফগান বাহিনী যুদ্ধলব্ধ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামও দখল করেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানিয়েছে, “আমাদের বাহিনী সীমান্তে থাকা শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সর্বদা প্রস্তুত। পাকিস্তান যদি আবারও আফগান ভূখণ্ডে হামলা চালায়, আমরা দৃঢ় এবং সংযমহীন জবাব দেব।”
কাবুল ও পাকতিকা প্রদেশে বিমান হামলার প্রতিক্রিয়া
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, কাবুল ও পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিমান হামলার জবাবে আফগান সেনারা এই অভিযান পরিচালনা করেছে। এই বিমান হামলায় অনেক আফগান সিভিলিয়ান আহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। তবে আফগান বাহিনী এও জানিয়েছে যে, তারা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ও সশস্ত্র মিলিশিয়া ঘাঁটিগুলোকে নিশানা করেছে, যাতে সিভিলিয়ানদের নিরাপত্তা সর্বাধিক রক্ষা করা যায়।
আফগান-ইসলামি প্রতিরক্ষা নীতি
আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বারবার জানিয়েছে, দেশের ভূখণ্ডের সার্বভৌমতা রক্ষার জন্য তারা কোনো রকম আপোস করবে না। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু শান্তি অর্জনের জন্য আমাদের দেশের নিরাপত্তা বজায় রাখা অপরিহার্য। যেকোনো সীমান্ত লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়ায় আমরা প্রয়োজনীয় এবং কঠোর পদক্ষেপ নেব।”
মুখপাত্র আরও বলেন, আফগান সেনারা সীমান্তরক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব পালন করছে। তারা স্থানীয়দের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে যাতে শান্তি বজায় রাখা যায়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে সম্প্রতি সংঘটিত ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সীমান্তে সন্ত্রাসবাদের বৃদ্ধি ও বিমান হামলায় সাধারণ মানুষ আহত হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।
এক আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, “আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত দীর্ঘদিনের। কিন্তু সাম্প্রতিক হামলা ও পাল্টা হামলার পরিশেষে, দুই দেশের সম্পর্ক আরও প্রভাবিত হতে পারে। এখানে সংযম ও কূটনৈতিক সমাধানের বিকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
সীমান্তে সতর্কতা ও প্রস্তুতি
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা সীমান্তবর্তী এলাকায় সতর্কতা বৃদ্ধি করেছে এবং নতুন নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন করেছে। হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং আধুনিক নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে।
প্রতি প্রদেশের সেনা কমান্ডাররা স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। আফগান বাহিনী নিশ্চিত করছে যে, যে কোনো সীমান্ত লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে তারা দ্রুত ও কার্যকরভাবে জবাব দেবে।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সাধারণ মানুষ এই ঘটনার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বলেন, “সীমান্তে সংঘর্ষের কারণে আমাদের জীবন ও কাজকর্ম প্রভাবিত হচ্ছে। আমরা চাই শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকুক।”
আফগান সেনারা স্থানীয়দের আশ্বস্ত করছে যে, তারা সীমান্তে শান্তি রক্ষার পাশাপাশি তাদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় সদা প্রস্তুত।
আফগান নিরাপত্তা নীতি ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আফগান নিরাপত্তা নীতি মূলত তিনটি স্তরে কাজ করে:
- সীমান্তরক্ষা ও সার্বভৌমতা রক্ষা।
- সশস্ত্র মিলিশিয়া ও অপরাধী গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযান।
- স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা ও জীবনধারার সুরক্ষা।
মন্ত্রণালয় আশ্বাস দিয়েছে, দেশের সার্বভৌমতা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের ভাষায়, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু যে কোনো সীমান্ত লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়ায় আমরা দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেব। আমাদের দেশের প্রতিটি ইঞ্চি ভূখণ্ড আমরা রক্ষা করব।”
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই হুশিয়ারি আবারও প্রমাণ করছে যে, দেশটি সীমান্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো আপস করবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর এখন আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের দিকে। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সংঘর্ষ প্রতিরোধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অপরিহার্য হলেও, আফগান বাহিনী তাদের দেশের ভূখণ্ড ও নাগরিকদের সুরক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত শুধু দুই দেশের বিষয় নয়, এটি সমগ্র অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং প্রতিবেশী দেশগুলোকে সমন্বিতভাবে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করতে হবে।
MAH – 13284 I Signalbd.com