বিশ্ব

ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দায়ী: অমিত

Advertisement

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শুক্রবার দিল্লিতে ‘অনুপ্রবেশ, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন এবং গণতন্ত্র’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়ে দাবি করেছেন, ভারতের মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে মূলত জন্মহার নয়, বরং পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ জড়িত। তিনি উল্লেখ করেছেন, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অনুপ্রবেশের কারণে ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যা বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে।

অমিত শাহ বলেন,

“১৯৫১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বিভিন্ন আদমশুমারির তথ্য দেখালে বোঝা যায়, মুসলিম জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি অনুপ্রবেশ ছাড়া সম্ভব নয়। কিছু রাজনৈতিক দল অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করছে, যা দেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।”

১৯৫১ থেকে ২০১১ সালের জনসংখ্যার তুলনা

অমিত শাহ তথ্য তুলে ধরেছেন যে, ১৯৫১ সালে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৮৪ শতাংশ এবং মুসলিম ৯.৮ শতাংশ। ২০১১ সালে হিন্দুদের সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে ৭৯ শতাংশে, আর মুসলিমদের সংখ্যা বেড়ে ১৪.২ শতাংশে। শাহ বলেন, এই পরিবর্তন কেবল জন্মহার বৃদ্ধি দ্বারা সম্ভব নয়।

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, আসামে ২০১১ সালের আদমশুমারিতে মুসলিম জনসংখ্যার দশকব্যাপী বৃদ্ধির হার ছিল ২৯.৬ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী কিছু জেলায় এই হার ৪০ শতাংশ, কোথাও কোথাও ৭০ শতাংশ। ঝাড়খণ্ডে আদিবাসী জনসংখ্যার হ্রাসের পেছনেও তিনি বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকেই দায়ী করেছেন।

অনুপ্রবেশ ও নাগরিকত্ব বিষয়ক মন্তব্য

শাহ বলেন, “যারা ধর্মের কারণে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, তারা উদ্বাস্তু। কিন্তু যারা অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক স্বার্থে অবৈধভাবে ঢুকেছে, তারা অনুপ্রবেশকারী।”
তিনি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) প্রসঙ্গে জানান, এটি কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়, বরং নির্যাতিতদের নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য। তিনি সতর্ক করেছেন, অনুপ্রবেশকারীরা ভোটার তালিকায় প্রবেশ করলে দেশের নীতি নির্ধারণে অংশ নেবে, যা গণতন্ত্রের জন্য হানিকর।

প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের ভূমিকা

শাহ প্রশাসনের প্রতি প্রশ্ন তোলেন, “যদি কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করে এবং জেলা প্রশাসন তাদের সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়, তবে অনুপ্রবেশ কিভাবে রোধ করা সম্ভব?” তিনি বলেন, শুধু কেন্দ্রীয় সরকার নয়, রাজ্য সরকারকেও দায়িত্ব নিতে হবে। কিছু রাজ্য সরকার অনুপ্রবেশে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে।

প্রভাবিত রাজ্য ও জেলা

শাহের বক্তব্য অনুযায়ী, সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে মুসলিম জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গের কিছু জেলা ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছে। আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের এই প্রবণতা স্থানীয় হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করেছে।

বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক মতামত

বিশ্লেষকরা বলেন, ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার পরিবর্তন রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ। অমিত শাহের বক্তব্য অনুযায়ী, অনুপ্রবেশ একটি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। অনুপ্রবেশের ফলে সীমান্তবর্তী এলাকায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পায়, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার ও সুযোগকে সীমিত করে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

শাহ পাকিস্তান ও বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যার হ্রাসের উদাহরণ দিয়েছেন। পাকিস্তানে ১৯৫১ সালে হিন্দুদের সংখ্যা ছিল ১৩ শতাংশ, যা এখন মাত্র ১.৭৩ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ২২ শতাংশ থেকে ৭.৯ শতাংশে নেমেছে। আফগানিস্তানে হিন্দু-শিখ সম্প্রদায়ও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
তিনি জানান, যারা ধর্ম-উদ্দেশ্যে ভারতে এসেছেন, তারা উদ্বাস্তু। আর যারা অবৈধভাবে ঢুকেছে, তারা অনুপ্রবেশকারী।

অমিত শাহের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, ভারতের মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে মূলত জন্মহার নয়, সীমান্তবর্তী দেশ থেকে অনুপ্রবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তিনি প্রশাসন, রাজ্য সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সতর্ক করে বলেন, অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণে না আসলে দেশীয় জনসংখ্যা ও গণতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

এম আর এম – ১৭২৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button