বিশ্ব

গাজায় সরবরাহের জন্য ৩ মাসের খাদ্য সহায়তা প্রস্তুত রয়েছে: ইউএনআরডাব্লিউএ

Advertisement

গাজার সমগ্র জনগণের জন্য তিন মাসের খাদ্য সহায়তা প্রস্তুত রেখেছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ (UNRWA)। সংস্থাটি জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলে তারা দ্রুতই এ সহায়তা গাজায় সরবরাহ করতে পারবে। একই সঙ্গে তারা ইসরায়েলকে মানবিক সহায়তার জন্য সীমান্ত খুলে দিতে আহ্বান জানিয়েছে।

তিন মাসের খাদ্য মজুত সম্পূর্ণ প্রস্তুত

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএর কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর জুলিয়েট টুমা শনিবার এক বিবৃতিতে জানান, গাজার সম্পূর্ণ জনগণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা সংস্থার হাতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে গাজার পুরো জনসংখ্যাকে তিন মাস পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করার মতো খাদ্য মজুত আছে। আমরা কেবল নিরাপদ সরবরাহ পথের অপেক্ষায় আছি।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রকাশিত পোস্টে সংস্থাটি জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী যেন ইউএনআরডাব্লিউএর মানবিক কার্যক্রমে বাধা না দেয়, সেই আহ্বান জানানো হয়েছে। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, গাজার মানুষের কাছে এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ। যুদ্ধবিরতির সুযোগে এই সহায়তা পৌঁছে দিতে চায় ইউএনআরডাব্লিউএ।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং মানবিক সহায়তার নতুন আশার আলো

গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসান চেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বহুদিন ধরে আহ্বান জানিয়ে আসছিল। অবশেষে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে স্বস্তির বাতাস বইছে।

ইউএনআরডাব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে “একটি মানবিক স্বস্তির মুহূর্ত” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “দুই দীর্ঘ বছরের ধ্বংসাত্মক সংঘাতের পর এই যুদ্ধবিরতি গাজার মানুষের জীবনে আশার আলো জ্বালবে।”

তিনি আরও জানান, ইউএনআরডাব্লিউএর হাতে শুধু খাদ্য নয়, বরং চিকিৎসা সামগ্রী, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রীও প্রস্তুত রয়েছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলেই এগুলো গাজায় পাঠানো হবে।

গাজার বর্তমান পরিস্থিতি: দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে এক জাতি

জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দুই বছরের অবরোধ, বোমাবর্ষণ ও বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে গাজায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাসকারী এই উপত্যকায় খাদ্য ও পানির সংকট দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণরা অপুষ্টি ও পানির অভাবে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউএনআরডাব্লিউএর হিসাবে, বর্তমানে গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

ইউএন সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করেছে যে, গাজায় “দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি” তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ইউএনআরডাব্লিউএর এই ঘোষণা গাজার জনগণের কাছে এক নতুন আশার বার্তা হিসেবে এসেছে।

ইসরায়েলের সঙ্গে ইউএনআরডাব্লিউএর সম্পর্ক ও সমালোচনা

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই ইউএনআরডাব্লিউএর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করে আসছে। ২০২৩ সালে হামাসের হামলার পর ইসরায়েল দাবি করে, ইউএনআরডাব্লিউএর কিছু কর্মী হামাসের সঙ্গে যুক্ত। এর পর সংস্থাটির কার্যক্রমে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরায়েল সরকার।

তবে ইউএনআরডাব্লিউএ এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তাদের ১২ হাজারেরও বেশি কর্মী গাজায় মানবিক সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন, যারা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন।

সংস্থাটি বলছে, তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সহায়তার মাধ্যমে গাজার সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। এই কর্মীরাই যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন ও পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।

গাজার শিশু ও শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ

ইউএনআরডাব্লিউএর তথ্য অনুযায়ী, গাজায় প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার শিশু বর্তমানে স্কুল থেকে বিচ্ছিন্ন। সংস্থাটি জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় খুলে দেয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

ফিলিপ লাজারিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষকরা প্রস্তুত আছেন, শিশুরা আবার শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারবে। শিক্ষা পুনরুদ্ধার গাজার পুনর্গঠনের প্রথম ধাপ।”

ইউএনআরডাব্লিউএর মতে, দীর্ঘদিনের সংঘাত গাজার এক প্রজন্মকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। তাই শিক্ষা ও মানসিক সহায়তা একসঙ্গে দিতে হবে, যাতে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।

মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান

ইউএনআরডাব্লিউএ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে—গাজার পুনর্গঠনে সহায়তা বাড়াতে হবে। ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, “গাজার মানুষ এখন আমাদের সবার দায়িত্ব। তাদের বাঁচিয়ে রাখা মানে মানবতার মর্যাদা রক্ষা করা।”

বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থা ইতোমধ্যে ইউএনআরডাব্লিউএর তহবিলে নতুন অনুদান দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা আশা করছেন, যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হলে গাজায় পুনর্গঠন কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা সম্ভব হবে।

যুদ্ধবিরতির পর মানবিক সহায়তার বাস্তবায়নই এখন মূল চ্যালেঞ্জ

গাজায় তিন মাসের খাদ্য সহায়তা প্রস্তুত থাকলেও তা কার্যকরভাবে বিতরণ করতে হলে টেকসই যুদ্ধবিরতি ও নিরাপদ পরিবহন পথ নিশ্চিত করা জরুরি।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউএনআরডাব্লিউএর ঘোষণাটি গাজার জনগণের জন্য আশার প্রতীক, তবে এই সহায়তা কত দ্রুত তাদের হাতে পৌঁছাবে—তা নির্ভর করছে ইসরায়েল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার ওপর।

মানবিক সহায়তার দরজা সত্যিই খুলে গেলে গাজার লাখো ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য সেটিই হবে নতুন জীবনের সূচনা।

এম আর এম – ১৭১৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button