বিশ্ব

স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে ইতিহাস সৃষ্টি করল ইরান

Advertisement

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান এবার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে। দেশটি এখন নিজ ভূখণ্ড থেকেই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম। ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তি এবং উৎক্ষেপণ যন্ত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতার মাধ্যমে এ অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হয়েছে। ইরানের মহাকাশ সংস্থার প্রধান হাসান সালারিয়েহ বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ইরানের সাফল্যের পেছনের প্রযুক্তি

ইরানি মহাকাশ সংস্থার প্রধান হাসান সালারিয়েহ বলেন, ইরান এখন এমন কয়েকটি দেশের মধ্যে রয়েছে যারা স্যাটেলাইট এবং উৎক্ষেপণ যন্ত্র নকশা, উন্নয়ন ও উৎক্ষেপণে পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন। বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশের মধ্যে মাত্র ১০–১১টি দেশই এমন প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করেছে, যার মধ্যে রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ রয়েছে।

তিনি আরও জানান, ইরান দেশীয় দক্ষতা ও সম্পদের ওপর নির্ভর করে তার অগ্রগতি অর্জন করেছে। স্যাটেলাইট এবং উৎক্ষেপণ যন্ত্র উভয় ক্ষেত্রেই সমান্তরাল অগ্রগতি অর্জন করা হয়েছে, যা জটিল এবং বিশেষায়িত প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন।

স্যাটেলাইট ইমেজিং প্রযুক্তিতে অগ্রগতি

সালারিয়েহ বলেন, ইরানের স্যাটেলাইট ইমেজিং প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। শুরুতে প্রতি পিক্সেলে প্রায় এক হাজার মিটার রেজোলিউশনের ছবি তুলতে সক্ষম উপগ্রহ তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে এটি কয়েকশ মিটার, তারপর কয়েক ডজন মিটার পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে। আজ ইরান এমন স্যাটেলাইট তৈরি করতে সক্ষম যা কয়েক মিটার রেজোলিউশনের ছবি তুলতে পারে।

এই অগ্রগতি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি গবেষণা কেন্দ্র এবং রাষ্ট্র-অনুমোদিত কোম্পানিগুলোর বিশেষায়িত দলের মধ্যে দৃঢ় সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।

ইরানের মহাকাশ কার্যক্রম দীর্ঘদিনের। আগের দিকে দেশটি অনেক ক্ষেত্রে বিদেশের প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল ছিল। তবে দেশীয় প্রযুক্তি ও সম্পদের ব্যবহার করে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগোয় ইরান। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ক্ষেত্রে এটি একটি বড় পদক্ষেপ।

বিশ্বের মহাকাশ প্রযুক্তি এখন শুধু একটি দেশের প্রতীক নয়, এটি কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক প্রভাবও প্রতিফলিত করে। ইরানের এই সাফল্য তাকে প্রযুক্তিগত স্বাধীনতার দিকে আরও এগিয়ে নিয়েছে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

ইরানের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে দেশটির কৌশলগত শক্তি এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদা বাড়বে। এছাড়া স্থানীয় গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সাফল্য মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর জন্য একটি উদাহরণ। স্থানীয় সম্পদ ও বিজ্ঞানী-প্রযুক্তিবিদদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে দেশীয় স্যাটেলাইট প্রযুক্তি উন্নত করা সম্ভব।

তুলনা ও পরিসংখ্যান

বিশ্বে ২০০টির বেশি দেশের মধ্যে মাত্র ১০–১১টি দেশই স্যাটেলাইট এবং উৎক্ষেপণ যন্ত্র উন্নয়নে পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করেছে। রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ইরানের এই পদক্ষেপ দেশটিকে এই সীমিত সংখ্যার দেশের মধ্যে নিয়ে এসেছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “ইরানের এই সাফল্য শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, এটি দেশের কৌশলগত ক্ষমতার প্রতিফলন। বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির সমন্বয়ে অর্জিত এই সাফল্য প্রমাণ করে যে স্থানীয় দক্ষতা ব্যবহার করেই বড় অগ্রগতি সম্ভব।”

ইরানের মহাকাশ সংস্থা আরও বলেছে, ভবিষ্যতে তারা উন্নত রিমোট সেন্সিং এবং স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে। এটি দেশের প্রতিরক্ষা ও পর্যবেক্ষণ সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।

ইরানের ইতিহাসে এই মুহূর্তটি একটি বড় ধাপ। স্থানীয় সম্পদ ও প্রযুক্তির মাধ্যমে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং উন্নত ইমেজিং ক্ষমতা অর্জন করা দেশটির জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইরান আরও শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড়াচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে তার মহাকাশ কার্যক্রমের বিস্তৃত সম্ভাবনা রয়েছে।

এম আর এম – ১৭০৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button