বিশ্ব

অস্ত্র প্রতিযোগিতার লড়াইয়ে পাকিস্তান ও ভারত, এবার নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তিতে নয়াদিল্লি

Advertisement

ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা প্রতিযোগিতা নতুন মোড় নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাজ্য ৪৬৮ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনী লাইটওয়েট মাল্টিরোল মিসাইল (LMR) সহ বিভিন্ন আধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি পাবে। পাকিস্তানও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে, যা ভারতীয় চুক্তির তুলনায় ব্যয় বেশি।

চুক্তির বিস্তারিত

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, চুক্তিটি ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও জোরদার করবে। এই চুক্তির আওতায় ভারতের সেনাবাহিনী যুক্তরাজ্যে নির্মিত লাইটওয়েট মাল্টিরোল মিসাইল (LMR) পাবে, যা আকাশ থেকে আকাশে, আকাশ থেকে স্থলে এবং স্থল থেকে আকাশে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে সক্ষম। চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে ৭০০টিরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে।

এই চুক্তি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কায়ার স্টারমারের ভারত সফরের সময় সম্পন্ন হয়েছে। তিনি মুম্বাইয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

পূর্বপ্রেক্ষাপট

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা প্রতিযোগিতা নতুন নয়। সম্প্রতি পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের একটি ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি করেছে। চুক্তির আওতায় পাকিস্তান AIM-120D-3 অ্যাডভান্সড মিডিয়াম রেঞ্জ মিসাইল পাবে, যা এই সিরিজের সর্বাধুনিক সংস্করণ। অর্থাৎ ব্যয় এবং প্রযুক্তির দিক থেকে পাকিস্তানের চুক্তি ভারতের চুক্তির তুলনায় অনেক বড়।

এ ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি দুই দেশের মধ্যে সামরিক সমতা এবং কৌশলগত ভারসাম্য নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

চুক্তির প্রভাব

নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি ভারতের জন্য কৌশলগত সুবিধা বাড়াবে। লাইটওয়েট মাল্টিরোল মিসাইল বা মার্টলেট ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ভারত তার আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও সামরিক প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ককে আরও শক্তিশালী করতে পারবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চুক্তি ভারত-যুক্তরাজ্যের মধ্যে জটিল অস্ত্র উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বের পথ খুলে দেবে।

অন্যদিকে পাকিস্তানও মার্কিন চুক্তির মাধ্যমে তার মধ্যম দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা উন্নত করছে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত ভারসাম্যের নতুন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

রক্ষণশীল সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “ভারত ও পাকিস্তানের এই প্রতিরক্ষা চুক্তি এক ধরনের প্রতিযোগিতামূলক নিরাপত্তা পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। দুই দেশই নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে সচেষ্ট।” তারা আরও বলেন, “এ ধরনের চুক্তি কেবল অস্ত্র সরবরাহই নয়, বরং প্রযুক্তিগত জ্ঞান, সামরিক উদ্ভাবন এবং কৌশলগত পরিকল্পনাও অন্তর্ভুক্ত করে। এটি ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলবে।”

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন চুক্তি উভয় পক্ষের জন্য অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক। এর ফলে প্রতিরক্ষা শিল্পে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই চুক্তি আন্তর্জাতিক মহলেও নজর কাড়ছে। যুক্তরাজ্য বলছে, ভারতীয় চুক্তি তাদের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বাজারে ব্রিটিশ প্রোডাক্টের চাহিদা বৃদ্ধি করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তানের চুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের কৌশলগত অবস্থান নিশ্চিত করতে চাইছে।

দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রতিযোগিতা সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে। তাই দুই দেশকেই কূটনৈতিক ও কৌশলগত সমন্বয় বজায় রাখতে হবে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং প্রতিরক্ষা চুক্তি কৌশলগত ভারসাম্যকে প্রভাবিত করছে। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের চুক্তি এবং পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন চুক্তি ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি কিভাবে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে প্রতিটি দেশের কূটনৈতিক এবং সামরিক পদক্ষেপের ওপর।

এম আর এম – ১৭০৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button