
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাধ্যমে গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় নতুন দিক নির্দেশনা দিয়েছে। এই যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই নোবেল শান্তি পুরস্কারের সম্ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের দাবি ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া মিলিয়ে বিষয়টি কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়েই রয়েছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
গাজা যুদ্ধবিরতির ‘প্রথম ধাপ’ ঘোষণা
গত শুক্রবার (৯ অক্টোবর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকা অবস্থায় ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইসরাইল ও হামাস গাজা খাতে অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে সম্মত হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এটি শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটি বিশ্ব শান্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যাল।”
ট্রাম্পের মতে, তিনি নিজে বৈশ্বিক সংঘাত নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং এই গাজা যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া তার নীতির ফলাফলের অংশ। যদিও তিনি নিজেই বলেন, “নোবেল কমিটি হয়তো আমাকে শান্তির জন্য বিবেচনা করবে না, তবু আমরা ইতিমধ্যেই সাতটি বড় সংঘাত মীমাংসা করেছি এবং অষ্টমটির কাছাকাছি পৌঁছেছি।”
ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রাসঙ্গিকতা
ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই নিজেকে ‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে উপস্থাপন করে আসছেন। ইসরাইল-হামাস সংঘাতের মতো বৈশ্বিক সমস্যার সমাধান ট্রাম্পের নোবেল জয়ের সম্ভাবনাকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পদক্ষেপসমূহ নোবেল কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে, কিন্তু এ বছর তার নাম তালিকায় থাকবে কি না তা এখনো অনিশ্চিত।
সুইডিশ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ পিটার ওয়ালেনস্টিন বলেন, “এই বছর ট্রাম্পের নাম নাও থাকতে পারে, কিন্তু ভবিষ্যতে তার প্রচেষ্টা ও শান্তি উদ্যোগ নোবেল জয়ের পথে ভূমিকা রাখতে পারে।”
ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টা
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্টত্বকালে আন্তর্জাতিকভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার বেশ কিছু প্রচেষ্টা দেখা গেছে। ভারত-পাকিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু সংঘাত নিরসনের প্রক্রিয়ায় তার পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে ধরা হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে যে, ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি ও কিছু আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত নোবেলের আদর্শের সঙ্গে পুরোপুরি মিল খায় না।
অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার বলেন, “গাজা সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ট্রাম্পের নীতি ও পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অনেককিছু আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার নোবেল নীতির সঙ্গে মেলে না।”
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক প্রভাব ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সশস্ত্র সংঘাতের জন্য সহায়তা এবং মানবিক পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। তবে রাজনৈতিক মহলে ট্রাম্পের নোবেল সম্ভাবনা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে।
একদিকে ট্রাম্পের সমর্থকরা তাকে শান্তির নেতা হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা সতর্কতা অবলম্বন করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজা সংকটের পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের সমাধানও ট্রাম্পের নোবেল জয়ের প্রাসঙ্গিকতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞ মতামত
বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের নীতি ও পদক্ষেপগুলো কিছু ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত ও বিতর্কিত। তবে তিনি যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা আন্তর্জাতিক শান্তি ও সংঘাত নিরসনে উল্লেখযোগ্য, যা নোবেল শান্তি পুরস্কারের ক্ষেত্রে কিছুটা গুরুত্ব পেতে পারে।
পিটার ওয়ালেনস্টিন বলেন, “ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। নোবেল কমিটি হয়তো তা বিবেচনা করবে, যদিও এ বছরের জন্য তা অনিশ্চিত।”
গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা এবং ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নোবেল শান্তি পুরস্কারের সম্ভাবনা যদিও অনিশ্চিত, তবু ট্রাম্পের পদক্ষেপ বিশ্ব শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী সময়ে পরিস্থিতি কীভাবে বিকশিত হবে তা পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করবে।
এম আর এম – ১৭০২,Signalbd.com