
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সেনা বাহিনীর জন্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ‘সব সীমা’ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর এই ঘোষণাটি কার্যকর হলে তা ইরানের প্রতিরক্ষা নীতি ও পারস্পরিক উত্তেজনার ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। তবে এখনও নিশ্চিত নয় যে এটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত হয়েছে কি না।
ঘোষণা ও বক্তব্যের বিশদ
ইরানের সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সদস্য আহমেদ বখশায়েশ আরদেস্তানি এক বক্তব্যে জানান, ‘‘ইরান তার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি উন্নত করেছে এবং যতটা প্রয়োজন মনে করবে ততটুকুই উন্নত হবে।’’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, আগে প্রধানত ২২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সীমা ছিল, কিন্তু এখন সেই সীমা কোনোঠাও নেই।
তিনি বলেন, ‘‘তেহরান ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার কোনো সীমা মেনে নেবে না এবং এটিকে সামরিক শক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’’
এই ঘোষণাটি আসে এমন এক সময়ে, যখন তেহরান এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সঙ্গে দীর্ঘকালীন শত্রুতা বিবেচনায়, এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মহলে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রেক্ষাপট ও পূর্ববর্তী নীতি
গত দিকগুলিতে ইরান সীমিত মধ্যম ও দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল। ২২০০ কিলোমিটারের সীমা একটি মোডারেট সীমা হিসেবে বিবেচিত ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেশে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইরান কয়েকবার আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা ও নিষেধাজ্ঞার মুখেও তার ব্যালিস্টিক ও আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা বাড়াতে চেয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ ছিল, ইরান ছদ্মভাবে নিষিদ্ধ মিসাইল প্রকল্প চালাচ্ছে। কিন্তু তেহরান সব সময় দাবি করেছে, তাদের প্রতিরক্ষা নিশ্চয়তা নিজেরই অধিকার।
এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা, ইসরাইল ও সৌদি আরবসহ অনেক দেশকে উদ্বিগ্ন করেছে। এই প্রসঙ্গে, যে কোন সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে বড় পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
খামেনির এই ঘোষণার প্রভাব বহুমুখী হতে পারে। প্রথমত, মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর প্রতিরক্ষাগত প্রস্তুতি বাড়ানো হবে। ইসরাইল, সৌদি আরব ও অন্য দেশগুলো প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাদের রক্ষাব্যবস্থা আরও শক্ত করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিবেশে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ ও নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হতে পারে। দলে দলে রাষ্ট্রসমূহ ইরানের প্রতি সমর্থন বা নিন্দা জানাবে।
তৃতীয়ত, জাতীয় নিরাপত্তা ও সামরিক খাতে ইরানকে বৃহত্তর বাজেট ও প্রযুক্তি বিনিয়োগ করতে হতে পারে। এই সিদ্ধান্ত সরকারি নীতি, অর্থনীতি ও জনমতকে প্রভাবিত করবে।
বিরোধীদের দৃষ্টিকোণ থেকে, তারা এই সিদ্ধান্তকে বিপজ্জনক ও চ্যালেঞ্জাত্মক হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, সীমাহীন ক্ষেপণাস্ত্র নীতি আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘোষণা পশ্চিমা বিশ্বের ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে। এটি প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধির পথ সুগম করবে এবং নির্ধারণ করবে কে আসলে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য রাখবে।
এক সামরিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত যদি কার্যকরীকৃত হয়, তাহলে ইরান দূরপাল্লার আঘাত সক্ষমতা অনেক বেশি স্বীকৃতি পাবে।’’ অন্যদিকে, কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘‘ইরানকে তার প্রভাবশালী অবস্থানে রাখতে হবে, তবে সীমাহীন ক্ষমতা দাবি করাটা আন্তর্জাতিক আইন ও মোড়ক বিধিনিষেধের সঙ্গে সংঘাতের কারণ হতে পারে।’’
এই পরিবর্তন রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে খামেনির রাজনৈতিক সক্ষমতা, সামরিক স্ট্র্যাটেজি ও আন্তর্জাতিক সমঝোতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
সংক্ষিপ্ত দৃশ্য ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ
এই ঘোষণাটি শুধুই একটি রাজনৈতিক ঘোষণা নয়, বরং এক সম্ভাবনার সূচনা হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সমীকরণ গড়ে উঠতে পারে এবং পরবর্তী দিনগুলোতে প্রতিক্রিয়া ধাপে ধাপে প্রকাশ পাবে।
তবে এখনও নিশ্চিত নয় যে এই নীতি চূড়ান্ত হোক বা বাস্তবায়ন করা হবে। আন্তর্জাতিক চাপ, দেশের জোট ও অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ—সবকিছুই সিদ্ধান্তের গতি নির্ধারণ করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপ, পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিক্রিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের প্রতিরক্ষা সমীকরণই নির্ধারণ করবে, ঠিক কোন পথে এই ঘোষণা যাবে।
একটি প্রশ্ন থেকেই যায় — এই সীমাহীন নীতিই কি হবে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন শান্তি ও স্থিতিশীলতার উপাদান, নাকি উত্তেজনার নতুন সূচনাই হবে?
এম আর এম – ১৬৯৯,Signalbd.com