বিশ্ব

গাজ্জায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা; ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ

Advertisement

গাজ্জায় দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংঘাত ও ধ্বংসযজ্ঞের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে। এতে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দ ও আশার আলো। যুদ্ধবিরতির গুরুত্ব, প্রেক্ষাপট ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন।

গাজ্জায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা: ফিলিস্তিনিদের মধ্যে উল্লাসের জোয়ার

অবরুদ্ধ গাজ্জায় দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ক্ষুধা ও ধ্বংসযজ্ঞের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসায় ফিলিস্তিনিরা উল্লাসে ফেটে পড়েছে। ইসরাইলি আগ্রাসন ও গণহত্যামূলক হামলায় বিধ্বস্ত গাজ্জা উপত্যকা কয়েক মাস ধরে নীরব ক্রন্দনের শহরে পরিণত হয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার রাতের ঘোষণায় অন্ধকারের মধ্যে একটুখানি আশার আলো খুঁজে পেয়েছে ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ।

খান ইউনিস, রাফাহ এবং গাজ্জা সিটির বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধবিরতির খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ উদযাপন করতে থাকে। আতশবাজি, স্লোগান আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে মুখর হয়ে ওঠে শহরের অলিগলি।

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া: মানুষের মুখে আনন্দ ও স্বস্তি

গাজ্জার বাসিন্দা আব্দুল মজীদ আব্দ রাব্বো বলেন,
“এই যুদ্ধবিরতির জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ। রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ডের অবসান হয়েছে। গোটা গাজ্জা আজ আনন্দে ভাসছে।”

খালেদ শাত নামে অন্য এক বাসিন্দা জানান,
“এগুলোই সেই মুহূর্ত যা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা যে উল্লাস আজ রাস্তায় দেখলাম, তা কেবল মুক্তির অনুভূতি নয়; বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে চলা যন্ত্রণার অবসানের প্রতীক।”

প্রেক্ষাপট: মাসের পর মাস ধ্বংসযজ্ঞ ও হতাহতের পর শান্তির চেষ্টা

২০২৫ সালের শুরু থেকেই ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত বোমাবর্ষণ, বিমান হামলা ও স্থল অভিযান গাজ্জাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, গত ছয় মাসে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বড় অংশই নারী ও শিশু। অবকাঠামো, হাসপাতাল, স্কুল ও শরণার্থী শিবিরগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।

ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড় উঠলেও যুদ্ধ থামছিল না। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা একে “গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ” বলে অভিহিত করেছে।

অবশেষে আন্তর্জাতিক চাপ, কূটনৈতিক আলোচনা এবং মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর প্রচেষ্টায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

  • জাতিসংঘ মহাসচিব যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি যদি টেকসই হয় তবে তা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
  • তুরস্ক ও কাতার মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা শান্তি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
  • যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের ওপর নজর রাখছে এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে।
  • মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, কেবল যুদ্ধবিরতি নয়, ইসরাইলি অবরোধ প্রত্যাহারও জরুরি, নইলে গাজ্জার মানুষ প্রকৃত মুক্তি পাবে না।

যুদ্ধবিরতির তাৎপর্য: সাময়িক না টেকসই?

গাজ্জায় এর আগেও একাধিকবার অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই তা ইসরাইলের আগ্রাসী নীতির কারণে ভঙ্গ হয়। ফলে এবারকার যুদ্ধবিরতি কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল যুদ্ধ থামানোই যথেষ্ট নয়; ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার, স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয়গুলো সমাধান করতে না পারলে কোনো যুদ্ধবিরতিই স্থায়ী শান্তি আনতে পারবে না।

ফিলিস্তিনি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা

যুদ্ধবিরতির পর ফিলিস্তিনিরা এখন চাইছে—

  1. মানবিক সহায়তা অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করা।
  2. ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো পুনর্গঠন।
  3. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা পুনঃস্থাপন।
  4. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর ভূমিকা।
  5. স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ।

গাজ্জার মানুষ বহু বছর ধরে দুঃখ-কষ্ট, অবরোধ ও যুদ্ধের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এবারকার যুদ্ধবিরতি তাদের জীবনে নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে। যদিও অনেকেই সন্দিহান, তবু এই ক্ষণিকের আনন্দই তাদের টিকে থাকার শক্তি জোগাচ্ছে।

MAH – 13250 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button