ক্রিকেট

সোহান-শামীমের লড়াইয়ে সিরিজ জয়, আফগানিস্তানকে হারাল বাংলাদেশ

Advertisement

খবরের বিস্তারিত প্রতিবেদন

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘরের মাঠ হোক কিংবা বিদেশের মাটিতে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নতুন ধারায় নিজেদের প্রমাণ করে চলেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে চলতি সিরিজে সেটিই আবারও প্রমাণ হলো। দ্বিতীয় ম্যাচে রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষে নুরুল হাসান সোহান ও শামীম হোসেনের অসাধারণ ব্যাটিং ভর করে বাংলাদেশ ২ উইকেট হাতে রেখে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। একইসঙ্গে এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচ সিরিজ নিশ্চিত করেছে টাইগাররা।

ম্যাচের শুরু: আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রিত ইনিংস

মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তান। শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলাররা নিয়ন্ত্রিত আক্রমণ চালান। বিশেষ করে শরিফুল ইসলাম ও নাসুম আহমেদের দারুণ বোলিংয়ে আফগানরা চাপে পড়ে যায়।

আফগান ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান লড়াই করলেও দলের রান তুলতে গেছেন সতর্কভাবে। তিনি করেন ৩৮ রান। অন্যদিকে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার রহমানউল্লাহ গুরবাজের ব্যাট থেকেও আসে কার্যকর ৩০ রান। তবে বাংলাদেশি স্পিনার রিশাদ হোসেন ও নাসুম আহমেদের ঘূর্ণিতে আফগানরা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে।

শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তান ১৪৭ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায়। বাংলাদেশের হয়ে নাসুম আহমেদ ও রিশাদ হোসেন ২টি করে উইকেট শিকার করেন। আরেকটি উইকেট তুলে নেন পেসার শরিফুল ইসলাম।

বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতে ধাক্কা

১৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশ দলের। দুই ওপেনার তানজিদ তামিম ও পারভেজ ইমন একই অঙ্কে মাত্র ২ রান করে সাজঘরে ফেরেন। এতে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় টাইগার শিবির।

সেখান থেকে সাইফ হাসান ও জাকের আলি অনিক মিলে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। তবে সাইফ ১৮ রান করে বিদায় নেন।

শামীম-জাকেরের লড়াই

বাংলাদেশ যখন ২৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছে, তখন ব্যাট হাতে দায়িত্ব নেন শামীম হোসেন। আক্রমণাত্মক মানসিকতায় খেলে তিনি দ্রুত রান তুলতে থাকেন। অন্যপ্রান্তে জাকের আলি অনিকও দেখেশুনে ব্যাটিং করেন। দু’জনের ব্যাট থেকে আসে কার্যকর জুটি।

তবে আফগান বোলার ওমরজাইয়ের বুদ্ধিদীপ্ত আক্রমণে প্রথমে ৩৩ রানে শামীম এবং পরে ৩২ রানে জাকের সাজঘরে ফেরেন। এতে আবারও ধাক্কা খায় বাংলাদেশ।

সোহানের দৃঢ়তা

একদিকে যখন নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়ছিল, তখন দলের আশা হয়ে দাঁড়ান উইকেটরক্ষক-ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান। চাপের মুহূর্তে কেবল ব্যাটিং নয়, শান্ত মস্তিষ্কে খেলে তিনি পুরো দলকে আত্মবিশ্বাসী রাখেন।

সোহানের ব্যাট থেকে আসে ২১ বলে ঝড়ো ৩১ রান। তার ব্যাটিংয়ে দারুণ সব বাউন্ডারি ও বুদ্ধিদীপ্ত সিঙ্গেল ছিল যা রান তোলাকে সহজ করে তোলে।

শরিফুলের অপ্রত্যাশিত অবদান

বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ যখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, তখন শরিফুল ইসলাম ব্যাট হাতে নেমে সবাইকে চমকে দেন। তিনি কেবল বলেই নন, ব্যাটিংয়েও দলের জয় নিশ্চিত করেন। শেষদিকে সোহানের সঙ্গে তার জুটি ম্যাচকে বাংলাদেশের পক্ষে নিয়ে আসে।

ফলাফল, ৫ বল বাকি থাকতেই ৮ উইকেট হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় টাইগাররা এবং শেষ ম্যাচটি কেবল আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়।

আফগান বোলারদের লড়াই

যদিও ম্যাচে হেরে গেছে আফগানিস্তান, তবে তাদের বোলার আজমতউল্লাহ ওমরজাই দুর্দান্ত ছিলেন। তিনি একাই ৪ উইকেট শিকার করে বাংলাদেশকে চাপে রেখেছিলেন। রশিদ খানও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন, তবে সোহান ও শরিফুলের জুটিকে থামাতে পারেননি।

সিরিজ জয়ে বাংলাদেশের ধারাবাহিকতা

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘরের মাঠে বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বেশ ধারাবাহিক সাফল্য পাচ্ছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজ জয়ের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো যে দলটি চাপের মধ্যেও লড়াই করতে সক্ষম।

তরুণদের পারফরম্যান্স

এই ম্যাচে জাকের আলি অনিক ও শামীম হোসেনের ইনিংস হয়তো বড় হয়নি, তবে তাদের আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং দলকে চাপে পড়তে দেয়নি। একইভাবে সাইফ হাসানও ইনিংস সাজানোর চেষ্টা করেছেন। এই তরুণরা ভবিষ্যতে দলের জন্য বড় সম্পদ হয়ে উঠতে পারেন।

সোহানের নেতৃত্বগুণ

নুরুল হাসান সোহান শুধু একজন ব্যাটার নন, বরং দলে একজন স্বাভাবিক নেতা হিসেবে পরিচিত। তার ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিং ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে। অভিজ্ঞতার অভাবে ভোগা বাংলাদেশ দলকে তিনি একাই ভরসা দিয়েছেন।

বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণ

বাংলাদেশি বোলাররা বিশেষ করে নাসুম আহমেদ ও রিশাদ হোসেন প্রমাণ করেছেন যে স্পিন আক্রমণ এখনো বাংলাদেশের মূল শক্তি। আর পেসার শরিফুল ইসলাম তার ধারাবাহিক উন্নতির প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন।

পরবর্তী ম্যাচ ও সম্ভাবনা

সিরিজ ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে। তবে শেষ ম্যাচটি হবে তরুণ ক্রিকেটারদের নিজেদের প্রমাণ করার বড় মঞ্চ। বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো একাধিক পরিবর্তন এনে নতুনদের সুযোগ দিতে পারে।

অন্যদিকে আফগানিস্তানও চাইবে অন্তত শেষ ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে সিরিজ শেষ করতে। তাদের বোলাররা ভালো করলেও ব্যাটিং বিভাগে ব্যর্থতা কাটাতে হবে।

বাংলাদেশের এই জয় শুধু একটি ম্যাচ জয় নয়, বরং দলটির মানসিক শক্তি ও চাপ সামলানোর ক্ষমতার প্রতিফলন। নুরুল হাসান সোহানের লড়াই, শামীমের ঝড়ো ব্যাটিং ও শরিফুল ইসলামের অপ্রত্যাশিত অবদান বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আরেকটি স্মরণীয় মুহূর্ত হিসেবে স্থান করে নিল।

MAH – 13141 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button