বিশ্ব

কোরআনে যে ভূখণ্ডকে বরকতময় বলা হয়েছে

Advertisement

পবিত্র কোরআনে একাধিক স্থানে এমন একটি ভূখণ্ডের কথা উল্লেখ আছে, যা বরকতময় বা কল্যাণময় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিহাস ও আধ্যাত্মিকতার দিক থেকে এই অঞ্চল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মূলত শাম অঞ্চল অর্থাৎ বর্তমান সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন এবং ফিলিস্তিনকে বোঝায়।

বরকতময় ভূখণ্ডের গুরুত্ব

কোরআনে উল্লেখিত বরকতময় ভূখণ্ডের মধ্যে ফিলিস্তিনকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে অসংখ্য নবী-রাসুল অবতীর্ণ হয়েছেন এবং তাদের অনুসারীরা বসবাস করেছেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত লুত (আ.)-কে এই ভূখণ্ডে হিজরতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। 

কোরআনে বলা হয়েছে, 

“আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে সেই দেশে পৌঁছিয়ে দিলাম, যেখানে আমি বিশ্বের জন্য অফুরন্ত কল্যাণ রেখেছি।” (সুরা আম্বিয়া: ৭১)

এই অঞ্চল প্রাচুর্যপূর্ণ নদী, ফল-ফলাদি এবং প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ। তাই আল্লাহ তাআলা এ ভূখণ্ডকে বরকতময় হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

নবী-রাসুলদের অবদান ও ইতিহাস

শাম অঞ্চলে হজরত মুসা (আ.)-এর যুগে বনি ইসরাইলকে পবিত্র ভূখণ্ডে প্রবেশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যদিও তারা প্রথমে নির্দেশ অমান্য করেছিল, তবু পরবর্তী সময়ে এই অঞ্চল বনি ইসরাইলের উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

 কোরআনে বলা হয়েছে, 

“যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হতো, তাদের আমি উত্তরাধিকারী করেছি এ ভূখণ্ডের পূর্ব ও পশ্চিম অংশে।” (সুরা আরাফ: ১৩৭)

হজরত দাউদ (আ.) ও হজরত সোলায়মান (আ.)-এর সময়ও এই অঞ্চলকে বরকতময় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে হজরত সোলায়মানের সময়ে প্রবল বায়ু তার আদেশক্রমে প্রবাহিত হতো সেই অঞ্চলে, যা আল্লাহর বরকতের অংশ হিসেবে বিবেচিত। (সুরা আম্বিয়া: ৮১)

বায়তুল মুকাদ্দাস ও ইসলামী ঐতিহ্য

ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসা ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। রাসুলুল্লাহ (সা.) মিরাজের রাতে এই মসজিদে গমন করেন এবং সব নবী-রাসুলদের ইমামতি করেন। মুসলমানদের প্রথম কিবলা হিসেবেও এটি গুরুত্বপূর্ণ।

কোরআনে বলা হয়েছে, “পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মসজিদুল হারাম থেকে আল-মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি বরকতময় করেছি।” (সুরা বনি ইসরাইল: ১)

প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও বরকত

শাম অঞ্চলে নদ-নদীর প্রাচুর্য, ফল-ফলাদি, উর্বর মাটি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপস্থিতি এটিকে কল্যাণময় ও বরকতময় করে তুলেছে। কোরআনে বহুবার এ অঞ্চলের কল্যাণের উল্লেখ আছে, যা মুসলিমদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে বিবেচিত।

পুণ্যভূমি হিসেবে ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিন শুধু প্রাকৃতিক বরকতের জন্যই নয়, বরং নবী-রাসুলদের আবাসস্থল ও স্মৃতিস্মারকের কারণে পুণ্যভূমি হিসেবে পরিচিত। এখানে হজরত ইসহাক (আ.), হজরত ইয়াকুব (আ.), হজরত মুসা (আ.), হজরত দাউদ (আ.), হজরত সুলাইমান (আ.) এবং হজরত ঈসা (আ.)-এর অনুসারীদের আবাস ছিল।

বরকতময় ভূখণ্ডের আধ্যাত্মিক প্রভাব

পবিত্র কোরআন ও ইতিহাসের ভিত্তিতে বোঝা যায়, এই অঞ্চল মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নয়ন ও ধর্মীয় শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম সম্প্রদায় এই ভূমিকে বিশেষভাবে সম্মান করে এবং এটি তাদের হৃদয়ে গভীরভাবে স্থান পায়।

কোরআনে উল্লেখিত বরকতময় ভূখণ্ড মুসলমানদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কেন্দ্র। নবী-রাসুলদের আবাসস্থল, প্রাকৃতিক সম্পদ, নদী ও ফলনশীলতা এবং বরকতের কারণে এটি বিশেষ মর্যাদা অর্জন করেছে। ইসলামী ঐতিহ্য ও ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে এই অঞ্চলের গুরুত্ব আজও অপরিসীম।

এম আর এম – ১৬৬৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button