বিশ্ব

গাজায় ২ বছরে ইসরাইলকে ২১ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন সামরিক সহায়তা দিয়েছে আমেরিকা

Advertisement

গাজ্জায় সংঘর্ষ শুরু হওয়ার দুই বছর পূর্ণ হওয়ার পর উঠে এসেছে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটসন স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দুই বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা হিসেবে কমপক্ষে ২১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে।

প্রতিবেদনটি যুদ্ধ ব্যয় এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে মার্কিন সরকার ইসরাইলকে এই বিপুল অর্থের সামরিক সহায়তা দিয়ে এসেছে।

তবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই পরিসংখ্যানে ভবিষ্যতে সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রয় অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ, এই সংখ্যা কেবল ইতিমধ্যে সরবরাহকৃত সামরিক সহায়তার হিসাব।

দুই বছরের সহায়তার বিস্তারিত

গবেষণায় উঠে এসেছে যে, গাজ্জা সংঘর্ষের প্রথম বছরে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে প্রায় ১৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার এবং দ্বিতীয় বছরে প্রায় ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার সরাসরি সামরিক সহায়তা প্রদান করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সহায়তা শুধুমাত্র অস্ত্র বা সরঞ্জামেই সীমাবদ্ধ নয়। এতে রয়েছে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সমর্থন, এবং কৌশলগত সহায়তা, যা ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) এবং পুলিশের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করেছে।

মার্কিন অস্ত্রের ওপর ইসরাইলের নির্ভরতা

গাজ্জা, পশ্চিম তীর, এবং অন্যান্য অঞ্চলে চলমান অভিযানগুলোর ক্ষেত্রে ইসরাইলের সেনাবাহিনী প্রায় সম্পূর্ণভাবে মার্কিন অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল

ইসরাইলের যুদ্ধ বিমানবাহিনীর বড় অংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • ৭৫টি এফ-১৫ যুদ্ধ বিমান
  • ১৯৬টি এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান
  • ৩৯টি এফ-৩৫ জেট

এছাড়াও, ইসরাইলের আক্রমণ এবং পরিবহন হেলিকপ্টারও প্রায় সবই মার্কিন তৈরি। বিশেষভাবে:

  • ৪৬টি অ্যাপাচি আক্রমণ হেলিকপ্টার
  • ২৫টি সি স্ট্যালিয়ন পরিবহন হেলিকপ্টার
  • ৪৯টি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার

শুধু বিমান নয়, মার্কিন সরবরাহকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র, উন্নত লক্ষ্যবস্তু এবং রাডার সিস্টেম, যা ইসরাইলের সামরিক সক্ষমতাকে বহুগুণ বাড়িয়েছে।

গাজ্জায় সামরিক সহায়তার রাজনৈতিক প্রভাব

বিশ্ব রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের বড়সড় সামরিক সহায়তা কেবল যুদ্ধের গতিপথেই নয়, বরং আঞ্চলিক রাজনৈতিক ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করে। ইসরাইলের পক্ষে এটি শক্তি এবং আত্মবিশ্বাস যোগায়, কিন্তু একই সঙ্গে এটি প্যালেস্টাইন এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে জটিল করে

বিশেষজ্ঞরা আরও উল্লেখ করেছেন, আমেরিকার এই সহায়তা সংখ্যাগত ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে অন্য দেশের তুলনায় ইসরাইলকে একটি অনন্য সুবিধা প্রদান করেছে। এর ফলে গাজ্জা ও পশ্চিম তীরের সংঘর্ষে ইসরাইলের সেনা কার্যক্রম অধিকতর কার্যকর হচ্ছে।

মার্কিন আইন ও আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রেক্ষাপট

মার্কিন সংসদ এবং প্রশাসনের জন্য ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া একটি দীর্ঘমেয়াদি নীতি। ১৯৮৭ সালের পর থেকে মার্কিন সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ইসরাইলকে প্রতিবছর প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দেওয়া হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ধারাবাহিক সহায়তা যুদ্ধের প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে গাজ্জা সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে, মার্কিন সরকার যুদ্ধকালীন সরঞ্জাম, হেলিকপ্টার, এবং অত্যাধুনিক বিমান সরবরাহে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে।

অস্ত্র সরবরাহ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার বিস্তারিত

ইসরাইলের সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মার্কিন প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন:

  • নেভিগেশন এবং লক্ষ্যবস্তু শনাক্তকরণ প্রযুক্তি যুদ্ধ বিমানে সংযুক্ত, যা আক্রমণের সঠিকতা বৃদ্ধি করে।
  • ড্রোন এবং বোমা-ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি ইসরাইলকে দূরবর্তী লক্ষ্যগুলিতে আক্রমণ চালাতে সাহায্য করে।
  • রাডার এবং স্যাটেলাইট ভিত্তিক নজরদারি প্রযুক্তি ইসরাইলকে মাঠের তথ্য দ্রুত সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করতে সক্ষম করে।

এভাবে মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম শুধুমাত্র অস্ত্র নয়, বরং তথ্য সংগ্রহ, কৌশলগত সিদ্ধান্ত এবং সামরিক অভিযানে সহায়ক প্রযুক্তিও সরবরাহ করে।

মধ্যপ্রাচ্যে সমীকরণ পরিবর্তনের প্রভাব

বিশ্ব রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজ্জা সংঘর্ষের দুই বছরের এই বিশাল সামরিক সহায়তা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা সমীকরণকে পরিবর্তন করেছে

  • ইসরাইলের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ক্ষমতা শত্রু রাষ্ট্রগুলোকে সতর্ক করছে
  • প্যালেস্টাইন অঞ্চলে সহিংসতা এবং মানবিক সংকট বর্ধিত হচ্ছে
  • আন্তর্জাতিক শান্তি উদ্যোগগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং দায়িত্ব নিয়ে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে, মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে আরও গুরুত্বারোপ হচ্ছে।

ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি

গবেষকরা সতর্ক করছেন যে, ইসরাইলকে চলমান সহায়তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতের সংঘাত আরও তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে
তারা বলেন, শুধু অস্ত্র সরবরাহই নয়, কৌশলগত সমর্থন ও প্রশিক্ষণও সংঘর্ষ বাড়াতে পারে।

বিশ্ব রাজনীতির জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বলা যায়, গাজ্জা যুদ্ধ শুরু হওয়ার দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে ২১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা প্রদান করেছে।

  • প্রথম বছরে: ১৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার
  • দ্বিতীয় বছরে: ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার
  • সরবরাহকৃত প্রধান অস্ত্র: এফ-১৫, এফ-১৬, এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমান, অ্যাপাচি, সি স্ট্যালিয়ন, ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার
  • প্রযুক্তি সহায়তা: লক্ষ্যবস্তু শনাক্তকরণ, রাডার, স্যাটেলাইট নজরদারি, ড্রোন পরিচালনা

এই সহায়তা ইসরাইলের সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও গভীর প্রভাব ফেলছে।

MAH – 13209 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button