বিশ্ব

হুথিদের হাতে আটকা পড়ল ৯ জন জাতিসংঘ কর্মী, তীব্র নিন্দা মহাসচিবের

Advertisement

ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের হাতে আরও নয়জন জাতিসংঘ কর্মী আটক হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সোমাবার, ৬ অক্টোবর, তিনি এই ঘটনা ঘিরে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জরুরি বিবৃতি দিয়েছেন এবং হুথি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় জাতিসংঘের স্থাপনাসমূহ জব্দ করার ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিকের মতে, হুথি বিদ্রোহীরা সম্প্রতি আটকা পড়া নয়জন কর্মীর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবিক কার্যক্রমে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনা ২০২১ সাল থেকে ইয়েমেনে আটক হওয়া কর্মীর সংখ্যা ৫৩-এ উন্নীত করেছে।

হুথি বিদ্রোহীরা কীভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে

হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় সনা শহর ও আশেপাশের এলাকায় দফায় দফায় জাতিসংঘের কর্মীদের আটক করেছে। তারা অনেকসময় মানবিক সহায়তা সরবরাহকারীদের আটক করে চাপ সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে এই ধরনের কর্মকাণ্ড ইয়েমেনের নাগরিকদের জন্য বিপজ্জনক এবং মানবিক সহায়তার ধারাবাহিকতা ভঙ্গ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুথি গ্রুপের এই আচরণ মূলত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করার একটি কৌশল। তারা জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত দাবিতে বাধ্য করতে এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়।

জাতিসংঘ মহাসচিবের মন্তব্য

মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “জাতিসংঘ কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও জবরদস্তি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আমাদের কর্মীরা মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ঝুঁকি নিচ্ছে। এমন ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।” তিনি আরও বলেন, “হুথি বিদ্রোহীদের অবিলম্বে এই সকল কর্মীকে মুক্তি দিতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে হবে।”

ইয়েমেনের বর্তমান পরিস্থিতি

ইয়েমেন দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সশস্ত্র সংঘাতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হুথি বিদ্রোহীরা দেশটির উত্তরাঞ্চলে দফায় দফায় হামলা চালাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জীবন ও দৈনন্দিন কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইয়েমেনের প্রায় ২৪ মিলিয়ন মানুষ বর্তমানে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

ইয়েমেনে সংঘাতের ফলে খাদ্য সংকট, পানীয় পানি ও স্বাস্থ্যসেবা অভাবসহ অন্যান্য মানবিক সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। হুথি গ্রুপের এই ধরনের পদক্ষেপ মানবিক সাহায্য কার্যক্রমকে আরও জটিল করে তুলছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে। তারা হুথি গ্রুপকে সতর্ক করেছে যে, আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মীদের ওপর আক্রমণ করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও আমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ইয়েমেনে মানবিক সংকট আরও গভীর হবে এবং সাধারণ মানুষকেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।

ইয়েমেনের নাগরিকদের অবস্থা

নাগরিকদের জন্য এই ধরনের সংঘাত মানে শুধুই নিরাপত্তাহীনতা নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সেবা ও খাদ্য সহায়তা পানিতে বাধা। বিশেষত শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্কুল, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কার্যক্রমও প্রভাবিত হচ্ছে।

সমাধানের পথ

বিশ্ব সম্প্রদায়ের মতে, ইয়েমেন সংকটের স্থায়ী সমাধান দরকার। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলোর যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে হুথি গ্রুপকে শান্তি আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, ইয়েমেনে মানবিক সাহায্য বাধাগ্রস্ত হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।

হুথি বিদ্রোহীদের হাতে ৯ জন জাতিসংঘ কর্মী আটক হওয়ার ঘটনা শুধুমাত্র ইয়েমেনের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে না, বরং এটি আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা ও মানবাধিকারকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। মহাসচিব গুতেরেস ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সক্রিয়ভাবে এই কর্মীদের নিরাপদ মুক্তি এবং মানবিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হবে।

MAH – 13205 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button