
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এলাকা গাজ্জায় ইসরাইলি বাহিনী সামরিক অভিযান চালিয়ে ৭০ জন ফিলিস্তিনি নাগরিককে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এই হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
ইসরাইলি বিমান হামলা ও নিহতদের সংখ্যা
গাজ্জার স্থানীয় গণমাধ্যম কার্যালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, শনিবার (৪ অক্টোবর) ইসরাইলি বিমান বাহিনী মোট ৯৩টি বিমান হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় ৭০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে গাজ্জা সিটিতে ৪৭ জন মারা গেছে। নিহতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত আহতদের সংখ্যা প্রায় ২০০-র উপরে পৌঁছেছে। আহতদের মধ্যে অনেকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গাজ্জার অবরোধ ও মানবিক সংকট
গাজ্জা দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলের অবরোধের মুখোমুখি। খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসাসেবা সীমিত হওয়ায় প্রতিটি হামলার পর সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির সম্মুখীন হয়। সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ক্ষয়ক্ষতি এবং মৃত্যুর সংখ্যা মানবিক পরিস্থিতির তীব্র অবনতির প্রমাণ দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবরুদ্ধ গাজ্জার মানুষজন ইতিমধ্যেই সীমিত খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে বসবাস করছে। এই ধরনের হামলা আরও বড় মানবিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ফিলিস্তিনের প্রতি এই সামরিক হানাহানি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, “নাগরিকদের উপর এমন আক্রমণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে। বিশেষ করে শিশু ও নারীদের হত্যার ঘটনায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহায়তা প্রদান করার আহ্বান জানিয়েছে।
ইতিহাসে গাজ্জার সংঘাত
ফিলিস্তিনের গাজ্জা দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছে। ২০০৭ সালের পর থেকে হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন এই অঞ্চল ইসরাইলের কঠোর অবরোধে বন্দি।
- ইসরাইলের সামরিক বাহিনী অনেক সময় রকেট হামলা, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা বা প্রতিরোধমূলক অভিযানকে অবলম্বন করে গাজ্জায় অভিযান চালায়।
- প্রতিটি হামলার পর সাধারণ মানুষ হতাহত হয় এবং অবকাঠামোগত ক্ষতি ঘটে।
- ২০২৩ ও ২০২৪ সালে গাজ্জায় অনুষ্ঠিত সামরিক অভিযানে শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘাত শুধুমাত্র রাজনৈতিক সমস্যা নয়, এটি মানবিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও সৃষ্টি করে।
নারী ও শিশুদের ক্ষয়ক্ষতি
বর্তমান হামলায় নারী ও শিশুদের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বিগ্ন। গাজ্জার স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, নিহতের মধ্যে ১৫ জন শিশু এবং ১০ জন নারী অন্তর্ভুক্ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গাজ্জার হাসপাতালে ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে অবরোধের কারণে পর্যাপ্ত মেডিকেল সরঞ্জাম পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
গাজ্জার স্থানীয় বাসিন্দারা বিমান হামলার পর আতঙ্কে পড়েছেন। তারা জানিয়েছে, “আমরা কোথায় লুকাই? আমাদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, আমরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সাহায্য চাই।”
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এই ধরনের হামলা গাজ্জার জনজীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। অসংখ্য মানুষ বাড়ি ও সম্পত্তি হারিয়েছে।
মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ কার্যক্রম
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজ্জায় ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা খাদ্য, পানি, চিকিৎসা সামগ্রী ও আশ্রয় প্রদান করছে।
- ইউনিসেফ এবং রেড ক্রস অবকাঠামোগত সহায়তা দিচ্ছে।
- স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী দল আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে এবং মৃতদেহের দাফন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, অবরোধ ও সামরিক হামলার কারণে মানবিক সংকট আরও গুরুতর হতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও শান্তি প্রয়াস
ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যেকার সংঘাত দীর্ঘদিনের ইতিহাস। বিভিন্ন সময়ে শান্তি আলোচনা হলেও তা স্থায়ী সমাধান আনতে পারেনি।
- জাতিসংঘ, EU এবং বিভিন্ন বিশ্ব শক্তি ফিলিস্তিনিদের জন্য সহায়তা এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করছে।
- শান্তি আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত বন্ধ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংঘাতের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ মানুষ সর্বদা ভোগান্তিতে থাকবে।
গাজ্জায় সাম্প্রতিক ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৭০ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এতে নারী ও শিশুদের ক্ষয়ক্ষতি নজরকাড়া। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন দেশ এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ত্রাণ কার্যক্রম চলছে।
গাজ্জার মানুষজন দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ জীবন, খাদ্য ও চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সংগ্রাম করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তৎপরতা এবং সহায়তা না থাকলে এই সংকট আরও তীব্র হবে।
MAH – 13185 I Signalbd.com