বিশ্ব

সৌদিতে ১৮ হাজার ৬৫০ প্রবাসী গ্রেপ্তার, ৯৯ শতাংশই ২ দেশের

Advertisement

সৌদি আরবে আবাসন, শ্রম ও সীমান্ত সুরক্ষা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গত সপ্তাহে ১৮ হাজার ৬৫০ প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত প্রবাসীদের মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশই ইয়েমেন ও ইথিওপিয়ার নাগরিক। এই অভিযান দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং আইন অমান্যকারী প্রবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়েছে।

গ্রেপ্তার অভিযানের বিস্তারিত

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানা যায়, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত সৌদি আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে যৌথ নিরাপত্তা অভিযান চালানো হয়। অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১০ হাজার ৬৭৩ জন আবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে, ৩ হাজার ৮২২ জন সীমান্ত নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এবং ৪ হাজার ১৭৮ জন শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে আটক হয়েছেন। এছাড়া সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে সৌদি আরবে প্রবেশের সময় ১ হাজার ৪৭৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ইয়েমেনি প্রবাসীর সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, ইথিওপিয়ান প্রবাসী ৪০ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশের নাগরিক ১ শতাংশ। অভিযানের পাশাপাশি ৫২ জনকে অবৈধভাবে সৌদি আরব ত্যাগের চেষ্টা করার সময় আটক করা হয়েছে। এছাড়া কিছু প্রবাসীকে পরিবহন ও আশ্রয় প্রদানের দায়ে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সৌদি আরবে প্রবাসী শ্রমিক পরিস্থিতি

বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ মানুষ বসবাস করছে, যার মধ্যে লাখ লাখ প্রবাসী শ্রমিক বিভিন্ন খাতের কাজে নিয়োজিত। দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম নিয়মিতভাবে আইন লঙ্ঘনকারীদের ধরপাকড় ও অবৈধ প্রবাসী আটকসংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে। অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য কঠোর আইন রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সীমান্ত অতিক্রমের ক্ষেত্রে ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানার বিধান।

গ্রেপ্তারের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

সৌদি সরকারের এই অভিযান আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। সৌদিতে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকরা সতর্ক হয়েছেন এবং অনেকেই নিয়মিত কাগজপত্র ও বৈধ থাকার শর্ত পূরণে জোর দিচ্ছেন। সৌদি আরবের এই ধরনের নিরাপত্তা উদ্যোগ স্থানীয়দের মধ্যে নিরাপত্তা বোধ বৃদ্ধি করছে, তবে প্রবাসীদের মাঝে উদ্বেগও তৈরি করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এই অভিযান শ্রমবাজারকে নিয়মিত করতে সাহায্য করবে, তবে সংখ্যালঘু দেশের শ্রমিকদের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে ইথিওপিয়া ও ইয়েমেনি শ্রমিকদের অনেকেই নিয়মিত আয় ও কাজের নিরাপত্তা হারানোর আশঙ্কায় আতঙ্কিত।

প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও প্রত্যাবাসন

গ্রেপ্তারকৃত প্রবাসীদের মধ্যে ১১ হাজার ৫৪৪ জনকে ইতিমধ্যেই নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে। বাকি প্রবাসীদের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে পাঠিয়ে ভ্রমণের প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবৈধ প্রবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা চলমান থাকবে।

প্রেক্ষাপট ও পূর্ববর্তী অভিযান

সৌদি আরবে নিয়মিতভাবে এই ধরনের অভিযান চালানো হয়ে থাকে। অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য আবাসন ও শ্রম আইন কঠোরভাবে প্রযোজ্য, এবং সীমান্ত সুরক্ষা আইন লঙ্ঘন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ২০২২ ও ২০২৩ সালে এই ধরনের অভিযানে বহু প্রবাসীকে গ্রেপ্তার ও প্রত্যাবাসন করা হয়েছিল।

বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সৌদি আরবের এই অভিযান শুধু আইন অমান্যকারীদের শাস্তি নয়, বরং দেশটির শ্রমবাজার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে নেওয়া একটি পদক্ষেপ। তবে যেসব দেশের প্রবাসীরা বেশি প্রভাবিত হচ্ছেন, তাদের সরকারেরও দায়িত্ব বাড়বে যাতে তাদের নাগরিকদের বৈধ ও সুরক্ষিতভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করা যায়।

সৌদিতে ১৮ হাজার ৬৫০ প্রবাসীর গ্রেপ্তার শুধু একটি সংখ্যা নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে আইন-শৃঙ্খলার প্রতিফলন। এখন দেখার বিষয়, সৌদি সরকার ভবিষ্যতে কতটা কঠোরভাবে এই আইন বাস্তবায়ন করে এবং প্রবাসী শ্রমিকদের বৈধভাবে কাজের সুযোগ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়।

এম আর এম – ১৬৩১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button