বিশ্ব

সিরিয়ায় আসাদের পতনের পর প্রথমবারের নির্বাচন

Advertisement

সিরিয়ার দীর্ঘ ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধ এবং বাশার আল আসাদের দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটার পর আজ দেশটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রথম নির্বাচন। এই নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রতীক নয়, এটি দেশটির জন্য নতুন এক রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করতে পারছে না।

সিরিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী, নির্বাচনের জন্য একটি ইলেকটোরাল কলেজ বা নির্বাচনী পরিষদ গঠন করা হয়েছে। এই নির্বাচনী পরিষদ দেশের ২১০ আসনের পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য বেছে নেবে। বাকী আসনগুলোর নিয়োগ দেবেন দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা, যিনি প্রায় এক বছর আগে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সহায়তায় ক্ষমতায় আসেন।

আসাদের পতন এবং শারার উত্থান

১৩ বছর ধরে সিরিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাত এবং গৃহযুদ্ধের পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে আসাদ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হন। সেই সময় থেকে আহমেদ আল-শারা নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয় এবং দেশটির রাজনৈতিক ও সামাজিক পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

শারার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের রাজনৈতিক সংস্কার, প্রশাসনিক পুনর্গঠন এবং নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং মানবাধিকার সংগঠন এই নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় বিশেষ নজর রাখছে।

নির্বাচনের কাঠামো ও ভোটপ্রক্রিয়া

নতুন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জনগণ সরাসরি ভোট দিতে পারছে না। তবে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুষ্ঠিত জেলা ও প্রাদেশিক ভোটিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী কলেজের সদস্যদের নির্বাচন সম্পন্ন করেছে।

নির্বাচনী কলেজের মাধ্যমে পার্লামেন্টে আসন বণ্টনের নিয়ম অনুযায়ী:

  • ২/৩ আসন: নির্বাচনী কলেজের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে।
  • ১/৩ আসন: প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার পক্ষ থেকে মনোনীত সদস্যরা পূরণ করবে।

এই কাঠামো নিয়ে কিছু সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে নাগরিকরা মনে করছেন যে, এই প্রক্রিয়া পুরোপুরি গণতান্ত্রিক নয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, এটি দেশের স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক সংহতি বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয়।

দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক চিত্র

সিরিয়ার বহু শহর এবং গ্রামে দীর্ঘ যুদ্ধের প্রভাব এখনও লক্ষ্য করা যায়। অবকাঠামো ধ্বংস, জনসংখ্যার স্থানচ্যুতি, এবং অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশের পুনর্গঠন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

এদিকে, নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে সিরিয়ার নাগরিকরা একটি স্থায়ী সরকার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করছে। শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দিগন্তে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

নির্বাচনের আগে এবং চলাকালীন সময়ে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ার পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। তারা উল্লেখ করেছে যে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কিছু দেশ সিরিয়ার এই নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংলাপ এবং স্থিতিশীলতার আশা প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবেশী দেশগুলো শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সিরিয়ার রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করছে।

ভোটারদের প্রতিক্রিয়া

নাগরিকদের মধ্যে এই নির্বাচনকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই এটিকে “অগণতান্ত্রিক” বলে মনে করছেন, কারণ সরাসরি ভোটের সুযোগ নেই। আবার অনেকে মনে করছেন, দীর্ঘযুদ্ধের পর এটি দেশে স্থিতিশীলতা এবং নতুন সরকার গঠনের প্রথম ধাপ

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, যদিও প্রক্রিয়াটি আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রিত, তবুও এটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কার এবং দেশের পুনর্গঠনের দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

নতুন পার্লামেন্ট গঠনের পর দেশের আইনসভা ও প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করবে।

  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন
  • নিরাপত্তা ও সামরিক পুনর্গঠন
  • অর্থনৈতিক পুনরায় উন্নয়ন
  • নাগরিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা

এই সব ক্ষেত্রেই নতুন সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে সিরিয়ার পুনর্গঠন আরও দ্রুত সম্ভব হবে।

সিরিয়ার দীর্ঘ যুদ্ধে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আজ নতুন রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হচ্ছে। প্রথমবারের নির্বাচন, যদিও আংশিক নিয়ন্ত্রিত, এটি দেশের জন্য রাজনৈতিক পুনর্জাগরণ এবং স্থিতিশীলতার প্রতীক। আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া দেশের নাগরিকদের জন্য নতুন আশা জাগাচ্ছে।

আসন্ন মাসগুলোতে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনর্গঠন কীভাবে এগোবে, সেটাই সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এই প্রক্রিয়াকে নজর রাখছে, এবং নাগরিকরা অপেক্ষা করছে একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ সিরিয়ার জন্য।

MAH – 13163 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button