
গাজার দিকে মানবিক ত্রাণ বহনকারী ফ্লোটিলা আটক হওয়ার প্রতিবাদে স্পেনের বিভিন্ন শহরে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালিয়েছেন। তারা স্লোগান ও ব্যানারসহ প্রতিবাদ মিছিলও করেছেন।
স্পেনের বড় শহরগুলোতে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি সম্পৃক্ততার অভিযোগে স্টারবাকস, বার্গার কিং, ক্যারেফোরসহ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালিয়েছেন। এ ঘটনায় বেশ কিছু রেস্তোরাঁ এবং দোকানের দেয়ালে তারা ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান লিখেছেন এবং ফিলিস্তিনের পতাকা প্রদর্শন করেছেন।
ঘটনা ও ভাঙচুরের বিস্তারিত
বৃহস্পতিবার স্পেনের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদকারীরা রাজপথে নেমে যান। তারা যান চলাচল বন্ধ করে দেয় এবং ইসরায়েলি মালিকানাধীন দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায়। স্থানীয়রা জানান, একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা দোকানের কাঁচ ভাঙছেন, দেয়ালে স্লোগান লিখছেন এবং ব্যানার উঁচু করে ধরছেন।
নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভ দমন করতে টিয়ার শেল ব্যবহার করে। এ সময় অনেক বিক্ষোভকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরাও ফ্লোটিলা আটকানোর প্রতিবাদে শহরের রাস্তায় নেমে আসে।
ঘটনার প্রেক্ষাপট
গত মাসে গাজার দিকে মানবিক ত্রাণ বহনকারী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটক করে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। ফ্লোটিলার মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্য, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মী। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সরাসরি গাজার উপকূলে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া। ইসরায়েলি নৌবাহিনী এই বহরকে আটকায়, যা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
ফ্লোটিলা আটক হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। ডাবলিন, প্যারিস, বার্লিন, জেনেভা সহ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে মানুষ রাস্তায় নেমে ফ্লোটিলা আটককে নিন্দা জানায়। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেয় যেমন ‘গাজা তুমি একা নও’, ‘ইসরায়েল বয়কট করো’, ‘ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চাই’।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ফ্লোটিলার অংশগ্রহণকারীদের সমালোচনা করে বলেছেন, “এই ধরনের আন্দোলন ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য কোনো বাস্তব উপকার বয়ে আনে না।” অন্যদিকে, কলম্বিয়া সরকার ইসরায়েলের সব কূটনীতিককে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে এবং বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে।
হামাস এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এটিকে “বেসামরিকদের বিরুদ্ধে জলদস্যুতা ও সামুদ্রিক সন্ত্রাসবাদ” হিসেবে উল্লেখ করেছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও তীব্র সমালোচনা করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, “আমাদের নৌবাহিনী সফলভাবে অবরোধ ভাঙার প্রচেষ্টা প্রতিহত করেছে এবং প্রচারণা ব্যর্থ করেছে।”
প্রভাব ও বিশ্লেষণ
এই বিক্ষোভ স্পেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। ভাঙচুরের কারণে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, কিছু প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের প্রতিবাদ আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই বিনা অপরাধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনগুলো রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের একটি মাধ্যম। তবে এই ধরনের ভাঙচুর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
স্পেনে ইসরায়েলি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর মূলত ফ্লোটিলা আটকানোর প্রতিবাদ। এটি রাজনৈতিক এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত সচেতনতার প্রকাশ। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই প্রতিবাদ কি ফিলিস্তিনের মানুষের বাস্তব সহায়তায় কতটা কার্যকর হবে?
এম আর এম – ১৬১২,Signalbd.com