জাতীয়

ডেঙ্গুতে আরও দুইজনের প্রাণহানি, হাসপাতালে ভর্তি ২৭৮

Advertisement

দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ২৭৮ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ডেঙ্গুর সর্বশেষ পরিস্থিতি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে ২৭৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, নতুন ভর্তি রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশন ছাড়া) ৭২ জন, ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৩ জন, ঢাকা বিভাগের অন্যান্য এলাকায় ৪৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৫ জন, খুলনা বিভাগে ১৮ জন, রংপুর বিভাগে ৫ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

চলতি বছরের সংক্রমণ ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান

চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২০ হাজার ৯৮০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু জুলাই মাসেই ভর্তি হয়েছেন দশ হাজারেরও বেশি রোগী।
এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৪৭ জন পুরুষ এবং ৩৬ জন নারী।

কেন বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা মৌসুমে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যায়। শহরের অপ্রয়োজনীয় জলাবদ্ধতা, নির্মাণাধীন ভবনের ফেলে রাখা পানি এবং মানুষের অসচেতনতা ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে।
গত কয়েক বছর ধরেই জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে ২০২৫ সালের এ মৌসুমে রোগীর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় দ্রুত বাড়ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।

জনসচেতনতা ও প্রতিক্রিয়া

সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গুর প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। সাধারণত জ্বর, শরীর ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, রক্তক্ষরণ ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নাগরিকদের সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগ, সিটি করপোরেশন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে কাজ করছে।

চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ করা। তাই ঘরবাড়ি, বাসা, অফিস বা আশপাশে কোথাও যাতে তিন দিনের বেশি পানি জমে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
তারা আরও জানান, কোনোভাবেই নিজে নিজে ওষুধ সেবন না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে হাসপাতালে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আহ্বান

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। জনগণকে নিয়মিত নিজের বাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখতে, জমে থাকা পানি ফেলে দিতে এবং প্রয়োজনে মশারি ও রিপেলেন্ট ব্যবহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শেষ কথা 

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও সচেতনতা জরুরি। এডিস মশার বিস্তার রোধ করতে হলে প্রতিটি পরিবারের সদস্যকে দায়িত্ব নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে আবহাওয়া অনুকূলে না এলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তাই সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

এম আর এম – ০৬২২ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button