বিশ্ব

সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটককৃত ১৩৭ অধিকারকর্মীকে তুরস্কে পাঠিয়েছে ইসরায়েল

Advertisement

 ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে গাজামুখী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ থেকে আটককৃত ১৩৭ অধিকারকর্মীকে তুরস্কে পাঠিয়েছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে আটক করার পর তাদের জোরপূর্বক ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে কূটনৈতিক আলোচনার পর আটক কর্মীদের মুক্তি দিয়ে তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়।

কীভাবে আটক করা হলো অধিকারকর্মীদের

গত বুধবার রাতে ভূমধ্যসাগরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বেশ কয়েকটি নৌযান থামিয়ে দেয় ইসরায়েলি নৌবাহিনী। নৌযানগুলো গাজার উদ্দেশে খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীসহ মানবিক সহায়তা নিয়ে যাচ্ছিল। ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত আটটি নৌকা থামিয়ে অধিকারকর্মীদের জোরপূর্বক নামিয়ে ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে নিয়ে যায়।

ফ্লোটিলার মুখপাত্র জানায়, আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন দেশের আইনজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী। এছাড়া রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ইউরোপীয় সংসদের কয়েকজন নির্বাচিত প্রতিনিধিও ছিলেন এ নৌবহরে।

কোন কোন দেশের নাগরিক ছিলেন

ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আটক হওয়া ১৩৭ অধিকারকর্মী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, আলজেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মালয়েশিয়া, বাহরাইন, মরক্কো, সুইজারল্যান্ড, তিউনিসিয়া এবং তুরস্কের নাগরিক। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও এই ফ্লোটিলায় ছিলেন এবং তাকেও আটক করা হয়েছিল।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা 

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা হলো একটি আন্তর্জাতিক মানবিক উদ্যোগ, যেখানে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ জন অংশ নেন। তাদের উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েলের অবরোধ ভেঙে গাজার সাধারণ মানুষের কাছে খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী ও ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া। এই ফ্লোটিলায় অন্তত ৩০টিরও বেশি নৌযান ছিল।

গাজার অবরোধ ভাঙতে আগেও একাধিকবার আন্তর্জাতিক নৌবহর যাত্রা করেছে। ২০১০ সালের বিখ্যাত “মাভি মারমারা” অভিযানের পর থেকে এ ধরনের ফ্লোটিলার প্রতি বিশ্বজুড়ে মানুষের আগ্রহ ও সংহতি তৈরি হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

অধিকারকর্মীদের আটক নিয়ে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, “গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা কোনোভাবেই অপরাধ হতে পারে না।” তারা ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে।

অন্যদিকে ইসরায়েলি সরকার জানিয়েছে, ফ্লোটিলার নৌযানগুলোকে আটক করা হয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে। তাদের দাবি, গাজার উদ্দেশে যাওয়া নৌবহরের মাধ্যমে হামাসের কাছে অবৈধ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার আশঙ্কা ছিল।

ফ্লোটিলায় থাকা অধিকারকর্মীদের অভিজ্ঞতা

তুরস্কে ফেরত যাওয়া কয়েকজন অধিকারকর্মী জানিয়েছেন, আটক করার পর তাদের কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অনেকে অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের প্রতি কঠোর আচরণ করেছে। তবে পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সবাইকে মুক্তি দিয়ে তুরস্কে পাঠানো হয়।

সুমুদ ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক বলেন, “আমরা গাজাবাসীর জন্য মানবিক ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী আমাদের পথ আটকে দিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন করেছে। তবুও আমাদের আন্দোলন থামবে না।”

ফিলিস্তিন ইস্যুতে নতুন আলোচনার জন্ম

আটক ১৩৭ অধিকারকর্মীকে মুক্তি দিয়ে তুরস্কে পাঠানোর ঘটনাটি বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের নেতারা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ একদিকে গাজায় মানবিক সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরেছে, অন্যদিকে ইসরায়েলের নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আরও বড় জনমত তৈরি করেছে।

সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক অধিকারকর্মীদের তুরস্কে ফেরত পাঠানোর মাধ্যমে একটি অধ্যায় আপাতত শেষ হলেও, গাজার মানবিক সংকট থেকে যায় অমীমাংসিত। প্রশ্ন রয়ে গেছে — আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক সহায়তার অধিকার কি বারবার নিরাপত্তার অজুহাতে বাধাগ্রস্ত হবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনার পর ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিশ্ব আরও সরব হবে এবং গাজার অবরোধ ভাঙার প্রচেষ্টা থেমে থাকবে না।

এম আর এম – ১৬০৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button