বিশ্ব

অবৈধ ইহুদি বসতির সঙ্গে জড়িত ১৫৮ প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করল জাতিসংঘ

Advertisement

জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের অবৈধ ইহুদি বসতিগুলোতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে লাভবান হওয়া ১৫৮টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায় বিশ্বের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, অনলাইন ট্রাভেল এবং আবাসন সেবা প্রদানকারী কোম্পানির নামও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তালিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য হলো সংঘাতপূর্ণ এলাকায় ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঠেকানো।

তালিকার বিস্তারিত

জাতিসংঘের তালিকায় নাম থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে এয়ারবিএনবি, বুকিং ডটকম, এক্সপেডিয়া এবং ট্রিপ অ্যাডভাইজার। এই সব প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের অবৈধ বসতি এলাকায় ব্যবসা পরিচালনা করছে, যা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) মতে অবৈধ।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগই ইসরায়েলি মালিকানাধীন হলেও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, ফ্রান্স এবং জার্মানিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানও এতে রয়েছে। সর্বশেষ হালনাগাদে ৬৮টি নতুন কোম্পানি যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে সাতটি প্রতিষ্ঠানের নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অপসারিত কোম্পানির মধ্যে যুক্তরাজ্যের ওপোডো এবং স্পেনের ইড্রিমস উল্লেখযোগ্য।

পশ্চিম তীর দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের অবৈধ দখলের মধ্যে রয়েছে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন, সড়ক, প্রাচীর ও চেকপোস্ট নির্মাণের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের চলাচল কঠোরভাবে সীমিত করা হচ্ছে। অবৈধ বসতি সম্প্রসারণে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা থাকায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক উল্লেখ করেছেন, “সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হলো মানবাধিকার লঙ্ঘনে অংশ না নেওয়া। তাদের কার্যক্রম যেন অধিকার ক্ষুণ্ণ না করে তা নিশ্চিত করতে হবে।”

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

তালিকা প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলে অভিহিত করেছে। তবে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করেছে এবং জানিয়েছে, তারা স্থানীয় আইন ও আন্তর্জাতিক নীতি মেনে চলার চেষ্টা করছে।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা তালিকা প্রকাশকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা আশা করছেন, আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পেলে অবৈধ বসতিগুলোর ব্যবসায়িক সহায়তা কমবে এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নতি হবে। অন্যদিকে, ইসরায়েল সরকার এই তালিকাকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করেছে এবং আন্তর্জাতিক নীতি বিরোধী বলেছে।

পরিসংখ্যান ও তুলনা

মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত ১৫৮টি কোম্পানির মধ্যে নির্মাণ, আবাসন, খনিজ ও খনি খাতের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি। এছাড়া ৩০০টিরও বেশি কোম্পানিকে পর্যালোচনার আওতায় রাখা হয়েছে। এই তথ্য ইঙ্গিত করছে যে, অবৈধ বসতি সম্প্রসারণে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সরাসরি অবদান রয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানি ফিলিস্তিনের এই অঞ্চলে পরিচালিত প্রকল্পে অর্থ লগ্নি করে বা সরাসরি অবকাঠামোগত উন্নয়নে অংশগ্রহণ করে। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তালিকা প্রকাশ আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এটি কোম্পানিগুলোর দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করবে।

আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা বলছেন, এ ধরণের পদক্ষেপ সাময়িক হলেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে বহু দেশের বিনিয়োগকারী এবং পর্যটন সংস্থাগুলোর মনোভাব প্রভাবিত হতে পারে।

জাতিসংঘের এই তালিকা প্রকাশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে। এটি ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, আন্তর্জাতিক চাপ কতটা কার্যকর হবে এবং ইসরায়েলি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেবে তা সময়ই দেখাবে।

এম আর এম – ১৫৩৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button