বিশ্ব

চীনের কুচকাওয়াজে যোগ না দিয়েই কেন ফিরে এলেন মোদি?

Advertisement

মাত্র দুদিন আগেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আশা করা হয়েছিল তিনি বেইজিংয়ে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজেও অংশ নেবেন। কিন্তু প্রত্যাশার বাইরে গিয়ে অনুষ্ঠান শুরুর আগেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আসেন। কেন তিনি এ সিদ্ধান্ত নিলেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে।

কুচকাওয়াজে অনুপস্থিতির বিস্তারিত

চীনের সামরিক কুচকাওয়াজ ছিল তাদের আধুনিক সামরিক শক্তি প্রদর্শনের একটি বড় আয়োজন। এতে অংশ নিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধিরা আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। মোদি চীনে সফররত থাকলেও অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতর এ বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও কূটনৈতিক মহল মনে করছে, মোদির এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বার্তা বহন করছে।

ভারত-চীন সম্পর্কের প্রেক্ষাপট

ভারত ও চীনের সম্পর্ক গত কয়েক বছরে নানা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গেছে। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের সেনাদের সংঘর্ষের পর থেকেই দিল্লি-বেইজিং সম্পর্ক কার্যত ঠাণ্ডা। সীমান্তে এখনও উত্তেজনা কমেনি। এ অবস্থায় চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি দেশের অভ্যন্তরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারত।

অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও বাণিজ্য ঘাটতি

চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে প্রায় ৯৯ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে দিল্লি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। একই সঙ্গে চীনা পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে ভারত নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটেও মোদির জন্য বেইজিংয়ের সামরিক মহড়ায় অংশ নেওয়া সহজ ছিল না।

আন্তর্জাতিক প্রভাব ও মার্কিন চাপ

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মোদির সিদ্ধান্তের পেছনে পশ্চিমা চাপও কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা দীর্ঘদিন ধরেই চীনের সামরিক শক্তি প্রদর্শন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ওয়াশিংটন ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে চাইলেও দিল্লি এখনো রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। এই জটিল ভারসাম্যের মধ্যে চীনের কুচকাওয়াজে যোগ দেওয়া মোদির কূটনৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারত।

অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিবেচনা

ভারতের জনগণের মধ্যে চীনবিরোধী মনোভাব এখনও প্রবল। সীমান্ত সংঘর্ষে নিহত ভারতীয় সেনাদের স্মৃতি তাজা। ফলে দেশে ফেরার পর বিরোধীরা যদি প্রশ্ন তোলে যে প্রধানমন্ত্রী কেন চীনের সামরিক শক্তি প্রদর্শনীতে অংশ নিলেন, তবে তা রাজনৈতিকভাবে সরকারকে বিব্রত করতে পারত। এ ঝুঁকি এড়াতেই মোদি সচেতনভাবে দূরে সরে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোদির অনুপস্থিতি শুধু একটি অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়া নয়, বরং একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। ভারতের লক্ষ্য হলো চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা, কিন্তু একই সঙ্গে দেশের ভেতরে চীনবিরোধী ভাবনাকেও গুরুত্ব দেওয়া। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও জাপানের মতো মিত্রদের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করাও জরুরি।

পরিশেষে

চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে যোগ না দেওয়া মোদির কূটনৈতিক কৌশলেরই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। এতে একদিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা হলো, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দিল্লি একটি বার্তা দিল—তারা চীনের শক্তি প্রদর্শনে সরাসরি হাততালি দিতে প্রস্তুত নয়। তবে ভবিষ্যতে সীমান্ত পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেবে, তার ওপরই নির্ভর করবে ভারত-চীন সম্পর্কের পরবর্তী ধাপ।

এম আর এম – ১১৬৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button