বিশ্ব

গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পকে ম্যাক্রোঁর নোবেল পুরস্কারের পরামর্শ

Advertisement

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সম্প্রতি এক স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, গাজায় চলমান সংঘাত অব্যাহত থাকলে নোবেল শান্তি পুরস্কারের কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করাই এখন সবচেয়ে জরুরি এবং এই ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গাজার পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

ফ্রান্সের এই ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন গাজায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহে ইসরায়েলি হামলায় বহু সাধারণ নাগরিক নিহত এবং আহত হয়েছেন। ম্যাক্রোঁ স্পষ্ট করে বলেন, “যদি গাজার যুদ্ধ চলতেই থাকে, যদি সেনারা সাধারণ মানুষকে হত্যা করতে থাকে, তবে আমরা নিশ্চুপ থাকতে পারি না। শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবী।”

তিনি আরও বলেন, শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছাই যথেষ্ট নয়। বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যা সংঘাত বন্ধের পথ খুলে দিতে পারে।

ট্রাম্পের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিয়ে ম্যাক্রোঁয়ের বার্তা

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের মতে, ইসরায়েলের বর্তমান নীতি কোনো পরিকল্পিত কৌশল নয়, বরং এটি তাদের জনগণকে অবিরাম যুদ্ধের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা আছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রই সেই অস্ত্র সরবরাহ করছে, যেগুলো দিয়ে গাজার যুদ্ধ চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে ফ্রান্স এই ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করে না।

ম্যাক্রোঁ বলেন, “আমরা যে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছি, তা ইসরায়েল ও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকার উভয়ের ওপর চাপ বাড়াতে সাহায্য করছে। একইসঙ্গে এটি ইসরায়েলিদের বোঝাচ্ছে যে, এটি একটি শান্তি উদ্যোগ, এবং আমরা তাদের সঙ্গে মিলিতভাবে এটি বাস্তবায়ন করতে চাই।”

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া

ফ্রান্সের অবস্থান আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সঙ্গে সংযুক্ত। সম্প্রতি, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম, অ্যান্ডোরা, ফ্রান্স, মাল্টা, মোনাকো এবং সান মারিনো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর একদিন আগে, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালও একই ঘোষণা করেছিল।

ফিলিস্তিনের প্রাক্তন নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিলেন। এরপর থেকে ১৯৩টি জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৫৯টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক এই সমর্থন ফিলিস্তিনের জন্য কূটনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করছে এবং ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

নোবেল শান্তি পুরস্কারের সম্ভাবনা এবং আন্তর্জাতিক প্রত্যাশা

ম্যাক্রোঁ স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার শুধুমাত্র সেই পরিস্থিতিতে সম্ভব যেখানে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হবে। তিনি বলেন, “যুদ্ধ বন্ধ করলেই শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ খোলা হবে এবং তখনই নোবেল শান্তি পুরস্কারের সম্ভাবনা তৈরি হবে। তাই ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

ফ্রান্স এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তি এই সংকট নিরসনে যে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা মূলত ইসরায়েলের নীতি পরিবর্তন এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে।

ফ্রান্সের প্রস্তুতি এবং কূটনৈতিক উদ্যোগ

ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর যদি ইসরায়েল ফ্রান্সের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তবে ফ্রান্স সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। তবে এই মুহূর্তে আমাদের শান্তির পথ ও বন্ধুত্বের পথ বেছে নেওয়া উচিত।”

ফ্রান্সের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ইসরায়েলের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনও নিশ্চিত করছে। এটি শুধুমাত্র সংঘাত বন্ধের প্রচেষ্টা নয়, বরং একটি স্থায়ী শান্তির ভিত্তি স্থাপনের লক্ষ্যে নেওয়া পদক্ষেপ।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সম্ভাব্য ভূমিকা

ম্যাক্রোঁ স্পষ্ট করেছেন, ইসরায়েলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রই যুদ্ধের সরঞ্জাম সরবরাহ করছে, তাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি এই সংঘাত থামানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন।

তিনি বলেন, “যদি আমরা এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেই, তবে এই যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে এবং সাধারণ মানুষ অপ্রতিরোধ্য ক্ষতির মুখে পড়বে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই মুহূর্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখতে পারেন।”

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পদক্ষেপ ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি এবং সংঘাত সমাধানের জন্য ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সমর্থন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

ফ্রান্স, লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম, অ্যান্ডোরা, মাল্টা, মোনাকো এবং সান মারিনো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে।

শান্তির প্রতি আন্তর্জাতিক প্রত্যাশা

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক নেতারা একাধিক বার বলেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোন স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। গাজা সংকট শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের নয়, সমগ্র বিশ্বে মানবাধিকার, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন উত্থাপন করছে।

ম্যাক্রোঁয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক চাপ মিলিতভাবে সংঘাত থামানোর ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। এই ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, অন্যান্য শক্তিশালী দেশগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

MAH – 12983 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button