বিশ্ব

গাজামুখী মানবিক সাহায্যের বহর: বিস্ফোরণ ও ইসরায়েলি ড্রোন

Advertisement

গাজামুখী মানবিক যাত্রা ও বিস্ফোরণের আতঙ্ক

গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী নৌবহর “গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা”-এর কাছে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। একইসাথে আকাশে একাধিক ইসরায়েলি ড্রোনের গতিবিধি লক্ষ্য করা গেছে বলে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা নিশ্চিত করেছে।

এই ফ্লোটিলা মূলত মানবিক সাহায্যবাহী জাহাজ, যেগুলো গাজার জনগণের জন্য খাদ্য, ওষুধ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্য একটাই—ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে গাজার মানুষের কাছে জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু যাত্রাপথেই শুরু হয়েছে নানা রকম চাপ, ভয়ভীতি আর হুমকির পরিবেশ।

ফ্লোটিলার অবস্থান ও যাত্রাপথ

টিউনিসিয়া, গ্রীসসহ একাধিক দেশ থেকে যাত্রা শুরু করেছে এই ফ্লোটিলা। বর্তমানে তারা একত্রিত হয়ে এগোচ্ছে। লাইভ ট্র্যাকিং তথ্য অনুযায়ী, জাহাজগুলো বর্তমানে গ্রীসের ক্রেট দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানবাধিকারকর্মী, ডাক্তার, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা ও স্বেচ্ছাসেবীরা এই ফ্লোটিলায় যোগ দিয়েছেন। তাদের একটাই উদ্দেশ্য—গাজার ২৩ লক্ষ মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

ভিএইচএফ রেডিওতে জ্যামিংয়ের অভিযোগ

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ফ্লোটিলার জাহাজগুলো ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি (ভিএইচএফ) রেডিও জ্যামিং-এর মুখোমুখি হয়েছে। এই জ্যামিংয়ের কারণে জরুরি যোগাযোগে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

স্বেচ্ছাসেবীরা দাবি করছেন, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে এসব করছে, যাতে তারা আতঙ্কিত হয় এবং গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারে।

ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ

ফ্লোটিলার যাত্রীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েল বারবার ড্রোন উড়িয়ে ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনানোর মাধ্যমে তাদের মনোবল ভাঙতে চাইছে। তাদের ভাষায়—

“ইসরায়েল আমাদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা জানি, গাজার মানুষের কষ্ট আমাদের এই সামান্য ভয় থেকে অনেক বড়।”

গাজার মানবিক বিপর্যয়

গাজায় দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের অবরোধ চলমান। খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর ঘাটতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতিমধ্যেই সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজা এক মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে

২০২৩ সালে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানের পর থেকে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও অনেকে। হাসপাতালগুলোতে নেই পর্যাপ্ত ওষুধ, নেই বিদ্যুৎ, নেই চিকিৎসক। শিশু ও নারী সবচেয়ে বেশি ভুগছে এই সংকটে।

ফ্লোটিলা আন্দোলনের ইতিহাস

“ফ্লোটিলা” শব্দটি নতুন নয়। এর আগে ২০১০ সালে তুরস্ক থেকে যাত্রা করা “মাভি মারমারা” নামের জাহাজ বহরের ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসে। সেই সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী নিহত হন।

এরপর থেকে প্রায়ই বিভিন্ন মানবিক সংগঠন গাজার জন্য ফ্লোটিলা পাঠানোর চেষ্টা করেছে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইসরায়েল বাধা দিয়েছে বা জাহাজ আটক করেছে।

“গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা” হলো এই ধারাবাহিকতারই সর্বশেষ উদ্যোগ। তবে এবারের অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, তাদের যাত্রা কেবল মানবিক নয়, এটি ন্যায়ের সংগ্রামও।

ফ্লোটিলার স্বেচ্ছাসেবীদের বিবৃতি

ফ্লোটিলার স্বেচ্ছাসেবীরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন—

“গাজার জনগণের ওপর খাদ্যাভাব ও গণহত্যার যন্ত্রণাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য ইসরায়েল ও তার সহযোগীরা যে সীমা অতিক্রম করছে তা মানবতার জন্য লজ্জাজনক। আমরা সেই লজ্জা মুছতে এগিয়ে যাচ্ছি।”

তারা আরও জানান, ড্রোন দেখা যাওয়া কোনো একদিনের ঘটনা নয়, বরং যাত্রার বিভিন্ন সময়ে বারবার ড্রোন দেখা যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এ ঘটনায় ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #FreeGaza, #SolidarityFlotilla, #EndTheSiege হ্যাশট্যাগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক দেশ, মানবাধিকার সংগঠন ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।

তবে ইসরায়েল তাদের পুরনো অবস্থানেই অনড়। তাদের দাবি, গাজার উদ্দেশ্যে যাওয়া এসব জাহাজে “অস্ত্র বা অবৈধ সরঞ্জাম” থাকতে পারে, যা নিরাপত্তার জন্য হুমকি। যদিও ফ্লোটিলা আয়োজকরা বারবার বলেছেন, সবকিছু প্রকাশ্য ও কেবল মানবিক সহায়তা বহন করছে।

গাজার জনগণের প্রত্যাশা

গাজার ভেতরে থাকা সাধারণ মানুষ এখনো আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে এই ফ্লোটিলার দিকে। তাদের বিশ্বাস, এই বহর পৌঁছাতে পারলে অন্তত কিছুটা হলেও দুর্ভোগ কমবে। অনেক পরিবার এখন দিনে একবেলা খাবার পাচ্ছে, আবার কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে।

“গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা” কেবল একটি মানবিক সাহায্যবাহী নৌযাত্রা নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে মানবতার লড়াইয়ের প্রতীক। ইসরায়েলের অবরোধ, ভয়ভীতি আর সামরিক চাপে জর্জরিত হলেও ফ্লোটিলার স্বেচ্ছাসেবীরা দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলেছেন।

বিশ্বের চোখ এখন এই ফ্লোটিলার দিকে। তারা কি গাজার তীরে পৌঁছাতে পারবে? নাকি আবারও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক করুণ অধ্যায় রচিত হবে—এই প্রশ্নই এখন সময়ের দাবি।

MAH – 12977 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button