
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সতর্ক করে বলেন, গাজায় চলমান গণহত্যা ও হামাসের হামলা কোনোভাবেই ন্যায্যতা পেতে পারে না। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক আইন রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
লুলার বক্তব্যের বিস্তারিত
নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে লুলা বলেন, “৭ অক্টোবরের হামলাকে কোনোভাবেই যৌক্তিকতার আওতায় আনা যাবে না। গাজায় অবস্থিত টন টন ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজারো নিরপরাধ নারী ও শিশু সমাহিত। এখানে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে উপেক্ষা করা হচ্ছে এবং পশ্চিমা বিশ্বের নৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের মিথ্যাচার প্রকাশ পাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, গাজায় ক্ষুধা এবং বাস্তুচ্যুতিকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে ফিলিস্তিনি জনগণ বিলীন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
লুলা একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সতর্ক করেন, এই ধরনের হিংসা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ করা না হলে শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে।
গাজা সংকটের প্রেক্ষাপট
গাজা অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাতের ফলে সাধারণ জনগণ শরণার্থী ও খাদ্য সংকটে ভুগছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, নারী ও শিশুদের উপর সহিংসতার মাত্রা বাড়ছে, এবং এতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গত কয়েক বছরে সংঘাতের জেরে হাজার হাজার মানুষ বসবাস হারিয়েছে এবং বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই লুলা মানবিক আইন মেনে চলার জন্য বিশ্ব নেতাদের সতর্ক করছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘে লুলার ভাষণকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন। তবে কিছু রাষ্ট্রের প্রতিনিধি গাজা সংঘাতের ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই অধিবেশনে তার নিজস্ব ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, তিনি কয়েকটি ক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছেন, তবে জাতিসংঘের অকার্যকারিতা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
গাজার মানুষের পরিস্থিতি
মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজার শিশু ও নারী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। পর্যাপ্ত খাদ্য, পানীয় জল এবং চিকিৎসা সুবিধা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
লুলা এই পরিস্থিতি মানবিক সংকট হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সতর্কতা এবং সহায়তা আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, লুলার বক্তব্যের গুরুত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শক্ত বার্তা। তারা বলছেন, “গাজায় চলমান হিংসা মানবিক আইন এবং আন্তর্জাতিক নীতি উলঙ্ঘন করছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।”
একজন বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেছেন, “যতক্ষণ এই ধরনের হামলা ও গণহত্যার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে না, সংঘাতের চক্র বন্ধ হবে না। লুলার সতর্কতা তাই সময়োপযোগী।”
লুলার ভাষণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গাজায় চলমান গণহত্যা ও হামাসের হামলা কোনোভাবেই ন্যায্যতা পেতে পারে না। মানবিক আইন রক্ষা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ব নেতাদের একত্রিত হয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় লুলার আহ্বানকে গুরুত্ব দেয়, তবে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সহিংসতা কমানো সম্ভব এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
এম আর এম – ১৪৮৯,Signalbd.com