বিশ্ব

শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ ‘অকার্যকর’: ট্রাম্প

Advertisement

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বক্তৃতায় তিনি জাতিসংঘকে কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি সম্পূর্ণ ‘অকার্যকর’। তার দাবি, জাতিসংঘের পরিবর্তে তিনি নিজে বিশ্বের একাধিক সংঘাত থামানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।

ট্রাম্পের বক্তব্যের মূল অংশ

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ৮০তম অধিবেশনের বিতর্ক পর্বে ভাষণ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বক্তৃতার শুরুতেই তিনি জাতিসংঘের কর্মক্ষমতা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার ভাষায়, “জাতিসংঘের অসাধারণ সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু এটি কখনোই সেই সম্ভাবনার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি।”

তিনি অভিযোগ করেন, বিশ্বের সংঘাত থামানোর দায়িত্ব জাতিসংঘের হলেও বাস্তবে তা করতে হয়েছে তাকে নিজেকেই। তার দাবি, তিনি অন্তত সাতটি বড় যুদ্ধ বা সংঘাত থামিয়েছেন, অথচ কোনো ক্ষেত্রে জাতিসংঘ কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখেনি।

জাতিসংঘ বনাম যুক্তরাষ্ট্র

এটি প্রথমবার নয়, ট্রাম্প জাতিসংঘের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। এর আগেও তিনি জাতিসংঘকে অকার্যকর আখ্যা দিয়েছিলেন এবং সংস্থাটির বিভিন্ন খাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন কমিয়ে আনার কথা বলেছিলেন।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে চলছে। মার্কিন প্রশাসন অনেক সময় জাতিসংঘকে সহযোগিতা করলেও, আবার অনেক সময়ে তাদের নীতিনির্ধারণী অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করেছে।

শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক

জাতিসংঘ ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এর মূল লক্ষ্য। কিন্তু বাস্তবে সিরিয়া, ইউক্রেন, গাজা উপত্যকা, আফগানিস্তান কিংবা ইয়েমেন—এমন অনেক অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত থামাতে সংস্থাটিকে ব্যর্থ হিসেবে দেখছেন সমালোচকরা।

ট্রাম্পের বক্তব্য নতুন কোনো অভিযোগ নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বনেতাদের একাংশের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে জাতিসংঘ রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়।

ট্রাম্পের দাবি: নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্যতা

ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেন, বিশ্বের একাধিক সংঘাত সমাধানে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি বলেন, “জাতিসংঘ যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে আমাকে ভূমিকা রাখতে হয়েছে। এর জন্য আমি নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য।”

যদিও তার এই দাবি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্পের বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনে তার রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করার কৌশলের অংশ।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আবারও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতি সংস্থাটির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমরা কখনোই শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা থেকে পিছু হটব না।”

অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ জাতিসংঘের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছে, যদিও সংস্থাটি সবসময় প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারে না, তবুও এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতির একটি অপরিহার্য প্ল্যাটফর্ম।

বিশ্লেষকদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই বক্তব্যের দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত, তিনি আবারও যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক নীতি সামনে আনতে চাইছেন। দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমিয়ে দিয়ে বিশ্বরাজনীতিতে নিজের গুরুত্ব বাড়ানোর কৌশল অবলম্বন করছেন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ একেবারেই অকার্যকর নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রে এটি আলোচনার মঞ্চ হিসেবে কাজ করছে, যা না থাকলে সংঘাত আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারত।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্য আবারও জাতিসংঘের কার্যকারিতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সমালোচকরা বলছেন, এটি তার রাজনৈতিক কৌশল মাত্র। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার—বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের ভূমিকা কার্যকর কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে সংস্থাটির সংস্কার ও কার্যকর উদ্যোগ ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘকে নতুন করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

এম আর এম – ১৪৮৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button