বিশ্ব

শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা কখনও হাল ছাড়ব না: জাতিসংঘ মহাসচিব

Advertisement

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ৮০তম অধিবেশনে শান্তি, মানবতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অবিচল থাকার অঙ্গীকার করেছেন সংস্থাটির মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যতই চ্যালেঞ্জ আসুক না কেন, জাতিসংঘ বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা থেকে কখনও পিছিয়ে যাবে না।

ঘটনার বিস্তারিত

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের বিতর্ক পর্বের উদ্বোধনী বক্তব্য দেন মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস। বক্তব্যে তিনি জানান, “আমরা কখনও হাল ছাড়ব না। এটাই আমার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি। আমরা শান্তির জন্য, মর্যাদার জন্য, ন্যায়বিচারের জন্য এবং মানবতার জন্য কাজ চালিয়ে যাব।”

গুতেরেস বলেন, পৃথিবী তখনই ইতিবাচক পথে এগোবে যখন বিশ্ব একসঙ্গে কাজ করবে। তিনি বিভিন্ন দেশের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে আন্তর্জাতিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

গাজা, সুদান ও ইউক্রেন প্রসঙ্গ

গুতেরেস তার বক্তব্যে চলমান আন্তর্জাতিক সংকটগুলোর দিকেও ইঙ্গিত করেন। ফিলিস্তিনের গাজায় বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ইউক্রেনে যুদ্ধ, সুদানের মানবিক বিপর্যয় এবং মিয়ানমার ও হাইতির অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকেও বৈশ্বিক শান্তির বড় হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই সংঘাতগুলো শুধু মানবিক ক্ষতির জন্ম দিচ্ছে না, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”

ন্যায্য অর্থনীতি ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা

জাতিসংঘ মহাসচিব বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রায়ই অবিচারের শিকার হয় এবং তাদের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল নিশ্চিত করা জরুরি।

এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাকে তিনি বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের আরও দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিতে হবে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন এখন মানবতার টিকে থাকার প্রশ্ন।”

উদীয়মান প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

তার ভাষণে গুতেরেস নতুন প্রযুক্তির দিকেও মনোযোগ দেন। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারে নৈতিকতা, দায়িত্বশীলতা এবং সঠিক নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেন তিনি। তার মতে, এআই মানব উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে, তবে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না হলে এটি নতুন হুমকিও তৈরি করতে পারে।

ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে অবস্থান

গুতেরেস ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ১৯৬৭ সালের সীমারেখার ভিত্তিতে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনই একমাত্র গ্রহণযোগ্য সমাধান। তার ভাষায়, “ইসরাইল ও ফিলিস্তিন নিরাপদ ও স্বীকৃত সীমারেখার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবে, আর জেরুজালেম হবে উভয়ের যৌথ রাজধানী—এই পথেই স্থায়ী শান্তি আসতে পারে।”

তিনি সতর্ক করে দেন, এ পথে অগ্রগতি ব্যর্থ হলে এই সংকট চিরস্থায়ী ও অসহনীয় হয়ে উঠবে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গুতেরেসের এই ভাষণ নতুন করে বিশ্বনেতাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিল। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বানকে তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন।

একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্য প্রমাণ করে, সংস্থাটি এখনো বৈশ্বিক শান্তি ও মানবতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান ধরে রেখেছে।”

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেসের ভাষণ বৈশ্বিক শান্তি ও সহযোগিতার বার্তা বহন করেছে। তিনি আবারও স্পষ্ট করেছেন, যুদ্ধ ও সহিংসতা নয়—একটি ন্যায্য, সমতাভিত্তিক ও টেকসই বিশ্ব গঠনে জাতিসংঘ তার প্রচেষ্টা কখনও থামাবে না। এখন বিশ্বনেতাদের হাতে দায়িত্ব, তারা কতটা আন্তরিকভাবে এই বার্তা বাস্তবায়ন করেন।

এম আর এম – ১৪৮৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button