
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ইতালির বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মিলান, রোম, ফ্লোরেন্স, ভেনিস, নেপলসসহ অন্তত ৭৫টি শহরে সাধারণ মানুষ এবং মানবাধিকার কর্মীরা রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে নিয়ে “ফ্রি প্যালেস্টাইন”, “গাজায় গণহত্যা বন্ধ করো” এবং “ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দাও”—এর মতো নানা স্লোগান উচ্চারণ করেন।
মিলান থেকে পালের্মো পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও সাধারণ নাগরিক অংশগ্রহণ করে। কিছু স্থানে স্কুল ও অফিস বন্ধ থাকে এবং যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতালিয়ান পুলিশ টিয়ারশেল ব্যবহার করে।
বন্দরের শ্রমিকদের কর্মবিরতি
জেনোয়া ও লিভোর্নো বন্দর এলাকায় বন্দরের শ্রমিকরা বিক্ষোভে অংশ নিয়ে কার্যক্রম বন্ধ রাখেন। তারা দাবি করেন, যুদ্ধ সামগ্রীর পরিবহন বন্ধ করা উচিত। শ্রমিকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ইতালির বন্দরগুলো ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
এই কর্মবিরতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে যথেষ্ট গুরুত্ব পায়, যা ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদকে আরও দৃঢ় বার্তা হিসেবে তুলে ধরে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের একাত্মতা
বিক্ষোভে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও অংশ নেন। তারা জানান, এটি আর শুধু ধর্ম বা অঞ্চলভিত্তিক সমস্যা নয়; এটি এখন মানবতার প্রশ্ন। শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষের উপর যেভাবে হামলা হচ্ছে, তা বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করার দাবি জানায়।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
মানবিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ইতালিতে এই প্রতিবাদী সমাবেশ শুধুমাত্র নৈতিক ও মানবিক কারণে নয়, রাজনৈতিক কারণে ও তাৎপর্যপূর্ণ। ফিলিস্তিনে চলমান সংঘাত আন্তর্জাতিক মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। বিক্ষোভকারীরা ইতালীয় সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছেন, পশ্চিমা অন্যান্য দেশের মতো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
এই প্রতিবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও গুরুত্ব পায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন সমাবেশে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ফলে রাস্তাঘাটে পরিবহন ব্যাহত হয়েছে। কিছু এলাকায় সরকারি অফিস ও স্কুলও বন্ধ ছিল। এটি প্রমাণ করে, সামাজিক প্রতিবাদ কেবল প্রতীকী নয়, বাস্তব প্রভাবও ফেলছে।
বিক্ষোভের মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সরকারের নীতি নির্ধারকদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠিয়েছে—ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার।
বিশ্লেষক মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইতালিতে এই ধরণের প্রতিবাদী সমাবেশ আন্তর্জাতিক স্তরে ফিলিস্তিনের পক্ষে চাপ বৃদ্ধি করবে। এটি অন্যান্য ইউরোপীয় দেশেও মানবিক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “বিক্ষোভকারীরা স্পষ্টভাবে দেখিয়েছেন যে, যুদ্ধ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োজন। এটি এক ধরনের রাজনৈতিক সতর্কতা ও সামাজিক সচেতনতার প্রকাশ।”
আয়োজকরা জানিয়েছেন, যতদিন গাজায় আগ্রাসন চলবে, ততদিন ইউরোপের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে। এটি একটি প্রতীকী আন্দোলন হিসেবে বিবেচিত হলেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জাগ্রত করার ক্ষেত্রে তা কার্যকর হতে পারে।
বিশ্লেষকরা আশা করছেন, এই প্রতিবাদগুলো ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংহতি শক্তিশালী করবে।
এম আর এম – ১৪৭৫,Signalbd.com