
ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার মেজর জেনারেল মুসাভি সম্প্রতি নিশ্চিত করেছেন যে, দেশটি যে কোনো হুমকির ‘সময়োপযোগী ও সিদ্ধান্তমূলক’ জবাব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ইরানের প্রতিরক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে আইআরএনএ নিউজ এজেন্সির মাধ্যমে তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী তাদের কৌশলগত ক্ষমতা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে শত্রুদের কার্যক্রমের প্রতিক্রিয়ায় সক্ষম।
মুসাভি বলেন, “আমাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এবং জাতীয় ঐক্য যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিটি হুমকি আমাদের জন্য কৌশলগত দিক থেকে সুযোগ তৈরি করে।”
সামরিক প্রস্তুতি ও কৌশল
শীর্ষ কমান্ডার হাইব্রিড যুদ্ধ এবং ‘জ্ঞানীয় যুদ্ধ’ মোকাবেলার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী সর্বদা নতুন প্রযুক্তি ও কৌশল উন্নয়নের মাধ্যমে শত্রুর যেকোনো পদক্ষেপের জবাব দিতে প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার নেতৃত্বে ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রতিটি পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দক্ষ ও সজাগ। এই প্রস্তুতি দেশীয় নিরাপত্তা ও অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা
মুসাভি ইরান-ইরাক যুদ্ধ আট বছরের অভিজ্ঞতাকে ‘বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধ ও স্থিতিস্থাপকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এই অভিজ্ঞতা ইরানের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ হিসেবে কাজ করেছে, যা আত্মনির্ভরতা, বিশ্বাস ও জাতীয় ঐক্যের শিক্ষা দিয়েছে।
এটি ইরানের সামরিক ক্ষমতাকে উন্নত প্রযুক্তি এবং আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর করেছে। মুসাভি উল্লেখ করেন, “অতীতের এই অভিজ্ঞতা আমাদের শত্রুর যেকোনো হুমকির জবাব দেওয়ার জন্য আরও শক্তিশালী করেছে।”
সাম্প্রতিক সংঘাত ও প্রভাব
মুসাভি সাম্প্রতিক ইসরায়েলি সরকারের আরোপিত ১২ দিনের যুদ্ধকেও উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এটি ইরানের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের জন্য হুমকিকে সুযোগে রূপান্তর করার ক্ষমতার প্রমাণ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের বিবৃতির মাধ্যমে ইরান তার অঞ্চলের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এবং শক্তি প্রদর্শন করছে, যা প্রতিবেশী দেশ এবং আন্তর্জাতিক মহলকে সতর্ক করছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্ব সংবাদমাধ্যম এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ইরানের এই ঘোষণাকে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এমন শক্তিশালী অবস্থান ইরানের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবকে বাড়াবে।
কিছু বিশ্লেষক বলেন, ইরানের এই ধরণের কৌশলগত সতর্কতা এবং প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি অঞ্চলে শক্তি ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে। অন্যদিকে, এটি কিছু প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উদ্বেগও তৈরি করতে পারে।
বিশ্লেষক মতামত
একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “ইরানের এই অবস্থান একদিকে দেশের নিরাপত্তা জোরদার করে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের কৌশলগত ক্ষমতা প্রদর্শন করে। এটি অঞ্চলে স্থিতিশীলতা এবং শক্তি ভারসাম্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
আরেকজন বিশ্লেষক বলেন, “শত্রুদের জন্য হুমকি এবং দেশের জন্য প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা সমান্তরালভাবে এগিয়ে যাওয়া ইরানের জন্য কৌশলগত সুবিধা নিশ্চিত করে।”
ইরানের শীর্ষ জেনারেলের এই বক্তব্য দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং হাইব্রিড যুদ্ধ মোকাবেলার প্রস্তুতির প্রমাণ দেয়। এতে দেশের নিরাপত্তা জোরদার হয় এবং অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক স্তরে ইরানের কৌশলগত অবস্থান দৃঢ় হয়।
এবার দেখার বিষয়, ভবিষ্যতে এই সতর্কতা ও প্রস্তুতি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অঞ্চলের নিরাপত্তার ওপর কী প্রভাব ফেলবে।
এম আর এম – ১৪৭৪,Signalbd.com