
গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি চিঠি পাঠিয়েছে, যেখানে তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রদানের বিনিময়ে তাদের হাতে থাকা জিম্মিদের অর্ধেক মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এই চিঠি বর্তমানে কাতারের হাতে রয়েছে এবং এই সপ্তাহের শেষে তা ট্রাম্পের কাছে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
চিঠিটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্ব পাচ্ছে। পাশাপাশি এটি ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই একটি নতুন কূটনৈতিক ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
হামাসের চিঠির বিস্তারিত
হামাসের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা নির্দিষ্ট সময়সীমার জন্য যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ইচ্ছুক। বিনিময়ে, তাদের হাতে থাকা জিম্মিদের অর্ধেক মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, চিঠিতে হামাস এখনো স্বাক্ষর করেনি, তবে কয়েক দিনের মধ্যে স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা রয়েছে। এই চিঠি কাতারের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে পৌঁছানো হবে।
গাজার পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে উত্তপ্ত। গত কয়েক মাসে হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চলতি বছরের জুলাইয়ে ফ্রান্স ও সৌদি আরব যৌথ উদ্যোগে একটি নিউইয়র্ক ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি স্থিতিশীলতার ভিত্তি তৈরি করা হয়েছিল।
এতে কাতার ও মিসরসহ কয়েকটি আরব দেশ সমর্থন জানিয়েছিল। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদও এই প্রস্তাব গৃহীত করে। লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের সুরক্ষা, পিএ-এর কাছে নিরাপত্তার দায়িত্ব হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা।
কাতারের ভূমিকা
চিঠিটি হস্তান্তরের আগে কাতারের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করা হচ্ছে। কাতার বর্তমানে জিম্মি মুক্তির আলোচনায় মধ্যস্থতা স্থগিত রেখেছে। এর কারণ হলো চলতি মাসের শুরুর দিকে দোহায় অবস্থানরত হামাস নেতৃত্বকে নির্মূল করার চেষ্টা চালানো হয়েছিল ইসরায়েলের পক্ষ থেকে।
কাতারের মধ্যস্থতা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি একটি নিরপেক্ষ পন্থায় ফিলিস্তিনি-আমেরিকান আলোচনায় সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই চিঠি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। ফক্স নিউজ, টাইমস অব ইসরায়েল এবং চ্যানেল ১২ নিউজের মতো সংবাদমাধ্যম এই খবর নিশ্চিত করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি সংকেত যে, হামাস কূটনৈতিকভাবে নিজের অবস্থান দৃঢ় রাখতে চাচ্ছে।
প্রভাব ও সম্ভাব্য পরিণতি
যদি ট্রাম্প প্রশাসন এই প্রস্তাব গ্রহণ করে, তা ফিলিস্তিনি অঞ্চলে সাময়িক শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হতে পারে। তবে এতে রাজনৈতিক চাপ এবং ইসরায়েল-আমেরিকার কূটনৈতিক অবস্থানের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যস্থতা ছাড়া কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিঠি মূলত ফিলিস্তিনি জনগণের সুরক্ষা এবং কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হামাসের এই পদক্ষেপ কৌশলগত এবং প্রতিক্রিয়াশীল। তারা বলছেন, চিঠি পাঠানো মানে শুধুমাত্র যুদ্ধবিরতি নয়, এটি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার একটি মাধ্যম।
বিশেষজ্ঞরা আরও উল্লেখ করেছেন, মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাতার এবং মিসর যেন কার্যকরভাবে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তা ফিলিস্তিনি স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।
ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের চিঠি ট্রাম্পকে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রেরণ করেছে। এটি যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কূটনৈতিক পদক্ষেপের গুরুত্ব আবারও প্রমাণ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্প প্রশাসন কি চিঠির প্রস্তাব গ্রহণ করবে এবং ফিলিস্তিনি অঞ্চলে সাময়িক শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে কি না।
এম আর এম – ১৪৬৮,Signalbd.com