ট্রাম্পকে তালেবান কর্মকর্তা: আফগানিস্তানের এক ইঞ্চি মাটি নিয়েও কোনো চুক্তি সম্ভব নয়
আফগানিস্তানের বাগরাম সামরিক ঘাঁটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন আফগান তালেবান সরকারের এক কর্মকর্তা। দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিফ অব স্টাফ ফাসিহউদ্দিন ফিতরাত রোববার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আফগানিস্তানের এক ইঞ্চি মাটিও কোনো চুক্তির মাধ্যমে কাউকে দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের এর কোনো প্রয়োজন নেই।”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক দাবির কঠোর জবাব দিয়েছেন। কয়েক দিন আগে যুক্তরাজ্যে এক সফরকালে ট্রাম্প বাগরাম ঘাঁটি ফিরিয়ে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। পরে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ হুঁশিয়ারি দিয়ে লিখেছেন, “আফগানিস্তান যদি যারা বাগরাম বিমানঘাঁটি তৈরি করেছে, সেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এটি ফিরিয়ে না দেয়, তবে খারাপ কিছু ঘটবে।”
বাগরাম ঘাঁটির গুরুত্ব ও ইতিহাস
বাগরাম আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হত। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে শুরু হওয়া সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে তালেবান সরকারকে উৎখাত করার মূল কেন্দ্র ছিল এই ঘাঁটি।
এরপর ২০২১ সালের জুলাইয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে মার্কিন ও ন্যাটো সেনারা বিশৃঙ্খলভাবে বাগরাম সামরিক ঘাঁটি ছেড়ে চলে যায়। এই সময় আফগান নিরাপত্তা বাহিনীও দ্রুত ভেঙে পড়ে এবং তালেবানরা পুনরায় ক্ষমতা দখল করে। ঘাঁটি ছাড়ার ফলে আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরার পথ সুগম হয়।
প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক প্রভাব
বাগরাম ঘাঁটি নিয়ে তালেবানের স্পষ্ট অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ট্রাম্প সম্প্রতি হুমকিও উচ্চারণ করেছেন, তবে নির্দিষ্ট কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা তিনি উল্লেখ করেননি।
ফাসিহউদ্দিন ফিতরাত বলেন, “কিছু পক্ষ রাজনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে ঘাঁটিটি পুনর্দখল করতে চায়। কিন্তু আফগানিস্তানের এক ইঞ্চি মাটিও কোনোভাবেই দিতে পারি না।” এই বক্তব্য দেশটির সার্বভৌমত্ব এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের গুরুত্বকে পুনর্ব্যক্ত করেছে।
আফগান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক
যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালে আফগানিস্তানে সেনা প্রবেশ করেছিল। দীর্ঘ ২০ বছরের সামরিক অভিযানের পরেও বাগরামসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বাগরাম ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা প্রথমে আলোচনার বিষয় ছিল, কিন্তু তালেবানের কঠোর অবস্থানের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তালেবানের কঠোর অবস্থান আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার একটি শক্তিশালী সংকেত। তাদের মতে, “যদিও যুক্তরাষ্ট্র বাগরাম ঘাঁটি পুনরায় নিতে চাইছে, তালেবানের স্পষ্ট ‘না’ এই ইস্যুতে কোনো ছেদ তৈরি করবে না।”
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, আফগানিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে জটিল। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের ইতিহাস এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তাপ বিবেচনা করলে, আফগানরা তাদের মাটিকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে রাজি নয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আফগানিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বন্দ্ব আন্তর্জাতিক মহলে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি এবং ন্যাটো সদস্যরা বাগরাম ঘাঁটির অবস্থান ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রভাব নিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ইস্যু কেবল সামরিক নয়, বরং কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবও তৈরি করবে।
আফগান তালেবান সরকারের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, বাগরাম সামরিক ঘাঁটি নিয়ে কোনো চুক্তি বা মাটির লেনদেন সম্ভব নয়। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আফগান সরকার তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দ্বন্দ্বের প্রভাব আফগানিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত সম্পর্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
এম আর এম – ১৪৪৭, Signalbd.com



