কর্মসংস্থান

ইতালি ২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ইইউবাহির ৫ লাখ নতুন কর্মভিসা দেবে

Advertisement

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে প্রায় ৫ লাখ নতুন কর্মভিসা দেবে ইতালি, যা তাদের দীর্ঘদিনের শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় এক বিরাট পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। ইতালির মন্ত্রিসভার এক সাম্প্রতিক ঘোষণায় জানা গেছে, ২০২৬ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত এই কর্মভিসাগুলো পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।

কর্মভিসার কোটা ও সময়সীমা

২০২৬ সালে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫০টি নতুন কর্মভিসা দেওয়া হবে এবং পরবর্তী দু’ বছরে এই সংখ্যা বাড়িয়ে মোট ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫০ জনকে বৈধ পথে ইতালিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। শ্রম ও শিল্প খাতের চাহিদা বিবেচনায় এই কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রকৃত কর্মভিসার আবেদন যাচাই করে এই কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে দেশের ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করা যায় এবং বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা গড়ে তোলা যায়।”

ইতালির জনসংখ্যা সংকট ও শ্রমিক প্রয়োজনীয়তা

ইতালির জনসংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২৪ সালে ইতালিতে নতুন শিশুর জন্মের চেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৮১ হাজার বেশি হয়েছে। মোট জনসংখ্যাও কমে ৫ কোটি ৮৯ লাখ ৩০ হাজারে নেমে এসেছে। এক দশক ধরে এই হ্রাস অব্যাহত থাকায় শ্রমিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে ইতালিকে অন্তত ১ কোটি অভিবাসী গ্রহণ করতে হবে, তবেই জনসংখ্যার এই পতন রোধ সম্ভব হবে। এই অভিবাসীরা দেশের কৃষি, শিল্প, সেবা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।

জর্জিয়া মেলোনির দ্বিতীয় বড় উদ্যোগ

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, যিনি প্রায় তিন বছর আগে ডানপন্থী জোটের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, এটি তার দ্বিতীয় বড় কর্মসংস্থান সংক্রান্ত উদ্যোগ। এর আগে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ইতালি অভিবাসীদের জন্য প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার কর্মপারমিট ইস্যু করেছে।

বৈধ অভিবাসনের গুরুত্ব ও অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ

মেলোনি সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো বৈধ অভিবাসনের সুযোগ বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করা এবং একই সাথে অবৈধ অভিবাসন রোধ করা। তিনি পুনর্বাসন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার পাশাপাশি ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীদের উদ্ধারকারী বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছেন।

ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি বলেছেন,
“বৈধ অভিবাসনের পথ উন্মুক্ত রাখতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এটি আমাদের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশকে দীর্ঘমেয়াদে উপকৃত করবে।”

কৃষি খাতের প্রতিক্রিয়া ও অর্থনৈতিক প্রভাব

ইতালির কৃষি সংগঠন কোলদিরেত্তি সরকারের এ কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, “শ্রমিক সংকটের মধ্যেই এই পদক্ষেপ মাঠের শ্রমিকদের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করবে, যা দেশের খাদ্য উৎপাদনে নতুন প্রাণসঞ্চার করবে।”

তাছাড়া, শ্রমিক সংকট থাকায় ইতালির বিভিন্ন শিল্প ও সেবা খাতেও বাধাগ্রস্ত হয়েছে উৎপাদন। নতুন কর্মভিসা দেওয়ার মাধ্যমে এসব সেক্টরেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিবাসন নীতি ও ইতালির ভূমিকা

ইইউর অন্যান্য দেশের তুলনায় ইতালি অভিবাসন নীতি গ্রহণে তুলনামূলকভাবে কঠোর হলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় তারা এখন এক ধাপ এগিয়ে এসেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে বৈধ শ্রমিক নিয়োগের মাধ্যমে ইতালি তাদের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে চায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় এই কর্মসূচি ইতালির জন্য ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করবে। যদিও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে, তবুও এটি ইতালির ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

ইতালির শ্রম বাজারে অভিবাসনের প্রভাব

ইতালিতে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক সংকট একটি বড় সমস্যা। অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে কৃষি, নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিষেবা খাতে অভাব লক্ষণীয়। তাই বৈধ অভিবাসনের মাধ্যমে দেশটির শ্রম বাজারে ভারসাম্য আনা অপরিহার্য।

ইতালির এই নতুন কর্মভিসা কর্মসূচি শ্রম বাজারে অভিবাসীদের আনতে সাহায্য করবে, যা দেশীয় শ্রমিকদের উপর চাপ কমাবে এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। এটি ইতালির সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি বড় ধাপ হবে।

তবে, সরকারের উচিত হবে অভিবাসীদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা এবং শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করা, যাতে তারা দেশীয় সমাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button