ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সৌদি আরবকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান হিজবুল্লাহ প্রধানের

হিজবুল্লাহ প্রধান নাঈম কাশেম ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সৌদি আরবকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলার পর তিনি এই মন্তব্য করেন। বার্তাসংস্থা রয়টার্স এই খবর নিশ্চিত করেছে।
নাঈম কাশেমের বক্তব্য অনুযায়ী, সৌদি আরবের সঙ্গে নতুন ধরনের সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব। এই সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ইসরায়েলকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা, সমস্যা সমাধানে আলোচনা এবং পুরনো মতবিরোধ দূর করার চেষ্টা করা হবে।
হিজবুল্লাহ ও সৌদি আরবের সম্পর্ক
২০০৬ সালের পর হিজবুল্লাহ এবং সৌদি আরবের সম্পর্ক তানাপোড়েনপূর্ণ। দীর্ঘদিনের বিরোধের কারণে ২০১৬ সালে সৌদি নেতৃত্বাধীন গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিল হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এরপর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মঞ্চে দুপক্ষের মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক বজায় ছিল।
তবে সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে দুই পক্ষের সম্পর্ক পুনর্গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যের নতুন শক্তি সমীকরণের কারণে সৌদি আরব এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে কূটনৈতিক সংলাপের পথ প্রশস্ত হচ্ছে।
ইসরায়েলি আগ্রাসনের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে শুক্রবারের হামলা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আক্রমণগুলোর অংশ। এই ধরনের হামলা সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ঘনঘন ঘটছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
নাঈম কাশেম বলেন, “ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে সৌদি আরবের সঙ্গে সহযোগিতা এবং ঐক্য অপরিহার্য। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হিজবুল্লাহর এই আহ্বান মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য পরিবর্তনের লক্ষণ। মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সৌদি আরবের মতো প্রভাবশালী দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।
এর পাশাপাশি, ইরান সমর্থিত এই সংগঠনটি সৌদি আরবের সঙ্গে নতুন কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে। এতে ইসরায়েল বিরোধী শক্তির সংহতি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্য পুনঃস্থাপন হতে পারে।
প্রভাব ও সম্ভাব্য ফলাফল
হিজবুল্লাহর আহ্বানের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। সৌদি আরবের সাথে সংলাপ ও কূটনৈতিক সংযোগ স্থাপিত হলে, ইসরায়েল বিরোধী শক্তি আরও সুসংহত হতে পারে। এছাড়া, লেবানন, সিরিয়া ও অন্যান্য প্রভাবশালী অঞ্চলে এই ঐক্য নীতি প্রভাব ফেলতে পারে।
স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য সৌদি আরবের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হিজবুল্লাহর কূটনৈতিক পরিকল্পনা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হিজবুল্লাহ সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় তৈরি করতে চাইছে। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল বিরোধী শক্তিকে সুসংহত করার পাশাপাশি সংলাপের মাধ্যমে পুরনো মতবিরোধ দূর করা সম্ভব হবে।
এই পদক্ষেপকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হিজবুল্লাহ প্রধানের আহ্বান সৌদি আরবকে একজোট হওয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে নতুন রাজনৈতিক সংলাপের সূচনা হতে পারে। এটি ইসরায়েল বিরোধী শক্তিকে একত্রিত করার পাশাপাশি অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রাখে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, বাস্তবে এই সংহতি কতটা কার্যকর হবে তা নির্ভর করছে পরবর্তী কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ওপর।
এম আর এম – ১৪৩৬,Signalbd.com